রকমারি

মৃত্যুবার্ষিকীতে স্ত্রীকে নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তার আবেগঘন স্ট্যাটাস

শাকিল আহমেদ:
প্রিয়জন হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের তা কেবল যে হারিয়েছে সেই বোঝে। ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া হয়তো জীবন চলে যাচ্ছে কিন্তু সেই জীবনে ভালোলাগা, ভালোবাসা, সুখ-ছন্দ, আনন্দ বলতে কিছু নেই। মানুষের জীবনে এমনও কিছু কষ্ট থাকে যেখানে সময়ও বড় অসহায়। সুখের সময়গুলো যত দ্রুত ফুরিয়ে যায় কষ্টের সময়গুলো ততই ধীরে চলে। সবকিছুই যেন থমকে যায়। প্রিয়জনের প্রতিটি স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা প্রতিটি রাতই যেন এক কষ্টের কাব্য। তবুও শত কষ্টের মাঝে মুখে হাসি নিয়ে জীবনের প্রয়োজনে বেঁচে থাকতে হয়। প্রিয়জনের স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এইতো জীবন।

মানুষ মরণশীল। নিশ্চয়ই সবাইকে একদিন পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিতেই হবে। এরচেয়ে চিরসত্য আর নেই। তবুও কিছু মৃত মানুষকে এতটাই একা করে দিয়ে যায় যা মেনে নিতে কষ্ট হয়। যে আগে চলে যায় সে হয়তো মরে গিয়েও বেঁচে যায়, আর যে বেঁচে থাকে তার জন্য বেঁচে থাকাটাই যেন মৃত্যুময়।

দুই বছর আগে আজকের এই দিনে প্রিয়জন(তমা) সঙ্গীকে হারিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের (প্রতিষ্ঠান) পরিচালক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিলো কামরুল ইসলামের। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু প্রিয়তমা স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুতে সুখের জীবনের ঘটে ছন্দপতন। জীবন সঙ্গিনীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার (স্ত্রী) কাছে খোলা চিঠি লিখে ফেসবুক ওয়ালে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে বন্ধু তালিকার অনেকেই তাকে সান্তনা দিয়েছেন। কেউ আবার স্ট্যাটাস পড়ে মন খারাপের কথা উল্লেখ করেছেন।

পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।

প্রিয় তমা,
অন্য আর আট দশটি দিনের মত ২০১৯ এর ১৯ জুন আমার শুরু হয়েছিল। আগের দিন রাতে রাত ১২ টায় আমার কাঁধে নিশ্চিন্ত নির্ভরতায় হাত রেখে শান্তিনগর পপুলারে প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ এর চেম্বার থেকে বের হওয়া। সপ্তাহখানেক ধরে জ্বর, হাত, পা ব্যথা ছিল তোমার। ডেংগু, চিকনগুনিয়া টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ। সুগারের মাত্রা ছিল ২৪। তবে কি ডায়াবেটিক বাসা বেঁধে ছিল আর ধীরে ধীরে তোমার জীবনীশক্তি কে দুর্বল করে দিয়েছিল অনেক আগে থেকেই। না হয়, ডা: আবুল কালাম আজাদ তো আগের রাতেই অভয় দিলেন ব্লাড কালচার রিপোর্ট পেলে এন্টিবায়োটিক শুরু করবেন। পপুলার থেকে কম্পাউন্ডার এল ব্লাড স্যাম্পল নিতে কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই স্ট্রোক হয়ে গেল। আমার চোখের সামনে তোমার এভাবে চলে যাওয়ার দৃশ্য আমি কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারিনা। জীবন কি তাহলে এমন-ই ক্ষনস্থায়ী? ছোট্ট জাইফাকে নিয়ে প্রায় ৩ টি বছর নারায়ন হসপিটাল আর ঢাকার হসপিটাল গুলোতে কি যুদ্ধটাই না চালিয়ে গেলে মমতাময়ী মায়ের অসীম ভালোবাসা আর আত্মবিশ্বাসী প্রত্যয়ে। হয়তো নিজের দিকেই খেয়াল রাখা হয়নি তোমার। জাইফাকে হাঁটতে শিখাতে কি যারপরনাই চেষ্টাটাই না করে গেলে।

জানো তমা, তোমার জাঈফা এখন পুরো ঘরময় দৌঁড়ায়, মজার মজার কথা শিখেছে। যারা মামনি অনেক বড় হয়ে গেছে, আমাকে রীতিমত শাসন করে। কিন্তু তোমার শাসনের ঘাটতিতে জানিনা ওর জীবন গঠন কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে কি না? আল্লাহ সহায় হলে মামনি আমাদের ইনশাআল্লাহ অনেক বড় হবে। ব্যস্ততা আর স্বভাবসুলভ দুর্বলতার কারনে আমি ওকে শাসন করতে পারি না সেইভাবে। তবে আমার বিশ্বাস তোমার স্বপ্ন পূরনে লক্ষ্যে অটল থাকবে আমাদের যারামনি। জারিফ কিন্তু লক্ষী ছেলের মত পড়াশোনায় সিরিয়াস, খেলাধূলায় আগ্রহী আর গত কয়েক বছর ধরে সবগুলো রোজা রাখছে, নামাজ পড়ছে আর মাঝেমধ্যে আমাকেও পড়াচ্ছে। আমি সাধ্যমত ওদের দাদু, নানু, খালা, ফুপুদের দুর্দান্ত সাপোর্ট নিয়ে ওদের আগলে রাখার চেষ্টা করছি।

তোমার অপূর্ন স্বপ্নগুলো সব হৃদয়ে লালন করে তীব্র কষ্ট বুকে চেপে হাসিমুখে বেঁচে আছি। তবে পেশাগত কারণে মাস দুয়েক হল সরকারি এতিমখানার বাচ্চাগুলোকে যখন খুব কাছ থেকে দেখছি, ওদের জীবনের গল্পগুলো জানতে পারছি, তখন আমার কষ্টকে আর কষ্ট-ই মনে হয়না রে। তবুও মনে মনে ভাবি, আমাদের সোনাবাচ্চা গুলোকে একটু গুছিয়ে দিয়ে জীবন থেকে ছুটি নিতে পারলে তবেই না ভাংগাচোরা জীবনটা একটা স্বস্তির পথযাত্রার সফল কাহিনী হবে। নইলে কেউ কেউ মন থেকে আর কেউবা করুনা করে হয়তো বলেই ফেলবে ” জীবন যুদ্ধে হেরে গেলাম আমি”। আল্লাহ সহায় হলে আমি হারবো না।

ওপারে ভালো থেকো ‘তমা’
তোমার চলে যাওয়ার দু’টি বছর
আমাকে প্রতি মুহূর্তে জানান দিয়েছে
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, ভালোবাসা কখনও হারায় না।

কামরুল
১৯ জুন,২০২১
সিদ্ধেশ্বরী

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

March 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031