কবিতা

অন্ধকারচ্ছন্ন নগরী আখ্যান

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

-শামসুদ্দিন হীরা

ধবল অন্ধত্ব আসার আগেই
ছুটে যাও গাঁয়ে
প্রত্যুষের কাঁচা রোদের ছোঁয়ায়
চাষবাস করো বিশ্বাসের,
ওখানে কোলাহল নেই
শুভ্র নৈঃশব্দ্যের গায়ে থোকা থোকা
কচুরি ফুল,
উড়ে যায় অজস্র কবুতর
ভেসে বেড়ায় পাতি হাঁস আপন খেয়ালে।
এগাঁয়ের উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে নগর দেখো
ধূঁয়ো ধূসর ঘনীভূত বৃত্তে ঠাসা
অস্থিরোগাক্রান্ত উত্তপ্ত নগরী।
এ নগর অন্ধকার তাড়ানোর
মেকি বৈদ্যুতিক কারখানা
অন্ধকারে স্বপ্নের উৎপাত
অন্ধকারেই মৈথুন্যপরায়ণ
অন্ধকারেই শাসকের আনন্দ।

এই নগরের প্রতিটি মানুষ
দৃশ্যমান অন্ধকার থেকে
গভীরতর অন্ধকারে নিমজ্জিত
এ গাঁয়ের উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে নগর দেখো
বিষণ্ণতায়, মহাজাগতিক এক দুঃখবোধ
গ্রাস করবে তোমাকে।
এ নগরের শাসক আর সুবিধাভোগী ব্যতিত
বাকী সব শবদেহে মোড়া
অস্পষ্ট উচ্চারন,গোমড়ামুখো তরুনি
মরণের দিগ্বিজয়ে লড়া
হাড্ডিসাড় মানুষ।
উঁইপোকায় ডানার বিস্তার
উদ্বাস্তু অন্ধকারে
অসংখ্য চোখ ঘিরে ফেলবে তোমাকে
চোখ বেঁধে দাঁড় করাবে
মৃত্যুর সম্মুখে,
তোমার করের টাকায় কেনা বুলেট
আচনক সময়ে নিয়ে যাবে
নিষিক্ত গাঢ় অন্ধকারে
তলিয়ে যাবে অতলে;
প্রিয় মুখ অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট,
দূর থেকে ভেসে আসবে
ঘাতকদের কোলাহল।

এ গাঁয়ের উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে নগর দেখো
ধর্ম চিহ্নে পুরোহিত পাদ্রি মোল্লা কতিপয়
বেগান নেতা ও সাংবাদিক
সমবেত উৎসবে রাজকীয় উদ্যানে,
রাজপথে সম্মেলিত বুটের আওয়াজ
দেয়ালে দেয়ালে কারাগার চিহ্ন
সাজানো এলানে মৃত্যুর আটপৌরে
অপেক্ষমান আসামী।
পায়ে কড়া বেড়ি নিয়ে ঝঙ্কার তোলে কয়েদী
সহৃদয় কৃষাণ বালিকার ন্যায়
বিড়ি এগিয়ে দেয় থান্ডব প্রহরি
প্রতিটি কয়েদখানা রাজবন্দীতে সয়লাব
সুশীল সহ-নাগরিকদের দাবী,
আরো চাই কয়েদখানা!
ঠাসা গিঞ্জি এ নগরে
বিরোধীদের যায়গা হউক কয়েদ খানায়।
বন্দীশালা বন্দিদের কাছে
ঘর থেকেও অনেকটা নিরাপদ।
ওখানে ক্রসফায়ার নেই, গুম নেই।
নেই গন্তব্য, পরিত্রাণও নেই
বিস্মিত সব ফেরেশতাকূল!

এই নগরে নৈঃব্দতা ভাঙে
ভাঙা গ্রামোফোনে একই গান বার বার বাজে
সত্য ইতিহাস ভেসে যায় কীর্তিনাশা জলে।
এ গাঁয়ের উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে নগর দেখো
এ নগরির যথার্থ মর্যাদাবান, নীতিবান
কাউকে খুঁজে পাবে না
কেউ নেই ইন্দ্রিয়সংযমী,
লুটেরা লাফাঙ্গা আর নারীভোগী
কর্মকর্তা।
প্রতিটি তরুন দাগি অপরাধী,
প্রতিটি তরুনী কৃতদাসীর প্রতীক
মিডনাইট ক্লাবে নৃত্যরত
যুবতীদের দেখে বলার সাধ্য নেই
ওরা আনন্দপিয়াসী নাকি শোকার্ত

এ নগরির সৌন্দর্যরূপী নারীগন
নিমগ্ন থাকে মধ্যরাতে চমকে উঠা রিংটোনে
রক্ত চলাচলে।
পরকিয়ায় পর নরে যৌবন পরবাসে।
হে যুবক প্রায়ান্ধ নগর ছেড়ে চলে যাও
ফসলের বিণ্যাসে।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031