ভ্রমন

থিম্পু থেকে পুনাখার দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার

পর্ব-০২

-অমিত গোস্বামী

পুনাখা শহরে একদিন
এলাম পুনাখা শহরে। থিম্পু শহর থেকে পুনাখার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার। পুনাখার যাওয়ার পথে দোচুলা। দোচুলা ভুটানিদের পূণ্য ভূমি। অসংখ্য ধর্মীয় নকশাখচিত ছোট ছোট ধর্মীয় পতাকায় দোচুলা ছেয়ে আছে। দোচুলায় মূল আকর্ষণ এখানকার বৌদ্ধমঠ। ভূপৃষ্ট থেকে ১০০৩১ ফুট উচ্চতায় এই স্মৃতি সৌধ। দোচুলায় সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দেয় ১০৮টি চোরটেন বা স্মৃতিসৌধ। ২০০৪ সালে ভুটানের রানিমাতা আশী দরযী ওয়াংমো ওয়াংচুক দক্ষিণ ভুটানে আসাম বিদ্রোহে মারা যাওয়া শহীদের স্মরণে এই ১০৮টি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করেন। কাঠের তৈরী এই স্তম্ভগুলিতে বৌদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস, ভুটানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের পরম স্পর্শ।

দোচুলা থেকে পুনাখার দূরত্ব মাত্র ৪১ কিলোমিটার। এখানে এসে দুটি নদী, মো চু আর ফো চু নামের দুটি নদী দেখতে পেলাম। নদী দুটি যেখান এসে মিশেছে ঠিক সেইখানে দুই নদীকে ঘিরে পুনাখা জং। দূর থেকে নদীর সঙ্গমস্থল আর পুনাখা জং-এর প্যানারোমা দৃশ্য অসাধারণ। এই পুনাখা জং-কে বলা আনন্দপ্রম প্রাসাদ। এটি আসলে পুনাখার প্রশাসনিক ভবন। ৬০০ ফুট সুদীর্ঘ এই জংটি তৈরী হয় সেই ১৬৩৭-৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯০৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ভুটানের প্রথম রাজা উজেন ওয়াংচুক এই পুনাখা জং থেকেই তার রাজত্ব পরিচালনা শুরু করেন। বর্তমানে ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ এই পুনাখা জং-টি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শীতকালীন বাসস্থান। ভুটানে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা দানের সবচেয়ে বড় আশ্রম।

প্রায় তিন তলা সমান পাথর আর কাঠের পাটাতনের সিড়ি বেয়ে আমরা পুনাখা জং এর মূল স্থাপনায় প্রবেশ করলাম। মূল ভবনটিও কাঠের। ভবনের দেয়াল জুড়েই বিশ্বাস আর ধর্মীয় অনুভুতির চিত্রকর্ম। পুনাখা জং-এ প্রবেশমাত্র দেয়ালের ডান দিকে চোখে পড়ে বিখ্যাত বৌদ্ধজ্যোতিষ চিত্র। ভারত আর চিনা শিল্পের সংমিশ্রণ এই জ্যোতিষচিত্রটি মানুষের জীবন ছবি। মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বেঁচে থাকার গুর রহস্যই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই চিত্রটিতে। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই একটি খোলা করিডোর। করিডোরকে ঘিরে চারিদিকে দুইতলা সমান স্থাপনা, ছোট ছোট অসংখ্য ঘর আর ঘরের প্রতিটি স্থান জুড়েই শিল্পের পরম ছোঁয়া।

জং-এর শেষপ্রান্তে রয়েছে কুয়েনরি মন্দিরে ঘ্যানমগ্ন বুদ্ধর সুবিশাল মূর্তি। বুদ্ধর একপাশে দ্বিতীয় বৌদ্ধ শিষ্য গুরু আর অন্য পাশে ভুটানের প্রতিষ্ঠাতা ঝাবদরাং এর মূর্তি। সবাই ভক্তিভরে বুদ্ধকে প্রণাম করছে। আর প্রণাম শেষে বুদ্ধর পায়ের কাছে পাত্রে রাখা তৈল নিয়ে মাথায় ছোয়ায়। মন্দিরের মূল আকর্ষণ বুদ্ধের জীবনচিত্র। মন্দিরের দেয়াল জুড়ে চিত্রকর্মগুলো ১২টি পর্বে বুদ্ধের জীবন আর বৌদ্ধধর্মের বুৎপত্তির ইতিহাস তুলে ধরে হয়েছে। রোদের আলো যখন পুনাখা জং-এর উপর পড়ে তখন জংটি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। সারা জং জুড়েই কেমন লালচে-কমলা আভা। লাল কাপড় আর ন্যাড়া মাথার যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও হতে পারে অন্যরকম আকর্ষণ। এরা মিতভাষী কিন্তু যথেষ্টই অতিথিপরায়ণ।
ভিক্ষুদের সাথে ছবি তোলার অনুরোধ করতেই তারা সানন্দে রাজি হয়ে যায়। পুনাখার জং-এর শৈল্পিকতা, স্বচ্ছ জলের বহতা পাহাড়ী নদী, নদীর উপরে কাঠের ঝুলন্ত সেতু, সব মিলিয়ে পুনাখা জং আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করলো।

সাসপেনশন ব্রিজ
ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাসপেনশন ব্রিজ, যার উপর থেকে ভুটানের পাহাড়, উপত্যকা ও ফু ছু নদীর এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে। এর চমৎকার নির্মাণশৈলী ও নজরে পড়ে সবার।

ছবি: লেখক

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031