অনু গল্প

মুখোমুখি

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

-আলেয়া আরমিন (আলো)

ফাল্গুনে জন্ম বলে বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিলো শিমুল। কে জানতো বড় হয়ে শিমুলের সাথে পলাশ নামের ছেলেটির পরিচয় ও বন্ধুত্ব হবে! হ্যাঁ ফেসবুকেই তাদের পরিচয়। মাঝে মাঝে শিমুল অবাক হয়, কাউকে না দেখেও যে প্রেমে পড়া যায় এই বিষয়টা ভেবে। কারণ, সে খুবই বাস্তববাদী মেয়ে। তারপরও সে কিভাবে এমন আবেগীয় সম্পর্কে জড়ালো তা ভাবতেই পারে না। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে কমপক্ষে আধাঘন্টা কথা হয় দুজনার। পলাশের কন্ঠস্বর অপূর্ব! তার বাচন ভঙ্গিতে শিমুলের মনে কি যে ভালোলাগার অনুরণন জাগে! এই জাদুময় কন্ঠস্বরের কারণেই এমন অদেখা পুরুষের প্রেমে পড়েছে শিমুল। এভাবেই প্রেমের রঙিন নদীতে যুগল সাঁতার কেটে দু’জনার সময় বয়ে যাচ্ছিলো।

কিন্তু, হঠাৎ বাসা থেকে শিমুলের বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করায়, সে পলাশের সাথে দেখা করার জন্য উতলা হয়ে উঠে। এদিকে দেখা করার ব্যাপারে পলাশ তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনা। শিমুলের জোরাজোরিতে অবশেষে রাজি হয় পলাশ। অবশেষে, ফাল্গুনের এক বিকেলে মৌন আলোয় শিমুল রঙা শাড়ি পড়ে এলোচুলে পলাশ গুঁজে পলাশের অপেক্ষায় বসে আছে শিমুল। পলাশেরও শিমুল রঙের পাঞ্জাবিই পড়ার কথা। কিন্তু, গোধূলির আলো আঁধারে মিশে যাচ্ছে, পলাশের দেখা নেই! অভিমানে শিমুলের চোখ উপচে জল গড়িয়ে পড়ে পার্কের দুর্বাঘাসের উপর। রাগে দুঃখে নিজেকে শাস্তি দিতে ইচ্ছে হয় তার। ভাবে, তবে কি পলাশ তার সাথে প্রতারণা করলো? নিজের মনকে বুঝিয়ে শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। ফিরে আসার জন্য উল্টো দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে পলাশের কন্ঠে তার নাম শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়ায়! পাশ ফিরতেই দেখলো হুইলচেয়ারে বসা এক তরুণ, পরণে শিমুল রঙের পাঞ্জাবি। শিমুল দ্রুত দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ায়।

—তুমি এসেছো, এতো দেরী করলে কেন? আমি সেই বিকেল থেকেই তোমার প্রতীক্ষায় বসে আছি।
—আমায় ক্ষমা করো শিমুল! আমি মোটেও সাহস জোগাতে পারছিলাম না । একজন পঙ্গু পুরুষের প্রেমে তো এতো সাহস থাকতেও নেই। অবশেষে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে সত্যের সামনে দাঁড় করালাম। তোমারও তো সত্যটা জানার অধিকার আছে। আমি তোমাকে আর ঠকাতে চাই না। ধূপছায়া সান্ধ্য মায়ায় আবছা আলোয় হুইলচেয়ারের সামনে কাঠের পুতুলের মত শিমুল দাড়িয়ে রইলো।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031