অনু গল্প

লণ্ঠন এবং বড় হতে চাওয়া ভাই-বোন

সাময়িকী : শুক্র ও শনিবার

-রেহানা বীথি

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১


এক গাঁয়ে ছিল দুই ভাই-বোন। মোট নয় ভাই-বোনের মধ্যে ওরা সবচেয়ে ছোট। তো, তারা স্কুলে যায়, খেলাধূলা করে, মাঠ-ঘাট চষে বেড়ায়, সবই একসাথে। তবে তাদেরকে হরিহর আত্মা বলা যায়, আবার না বললেও ভুল হবে না। কারণ তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটিও হয় বিস্তর। ঠুক কথাতেই তাদের ঠোকাঠুকি নিত্য ঘটনা। বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলায়। কারণ কী?

কারণ হারিকেন। মানে লণ্ঠন। ঠিক মাগরিবের আগে, বাড়ির সবকটি লণ্ঠন মেজে-ঘষে পরিষ্কার করে রাখা হতো লম্বা রকে। ওরা দুই ভাই-বোন যে যার যার খেলাধূলা সেরে, রাখাল হয়ে যাওয়া পা হাঁটু পর্যন্ত ধুয়ে, মাগরিবের নামাজের পর পরই পাটি পেতে পড়তে বসতো। বই নিয়ে দু’পাশে দু’জন, মাঝখানে লণ্ঠন। গুনগুন পড়ার আওয়াজ, সাথে ঝিঁঝিঁর আওয়াজ। কোনও কোনওদিন আকাশে একফালি চাঁদও ভেসে উঠতো। দিনের উত্তাপ হারিয়ে গিয়ে ঝিরিঝিরি হাওয়া বইতো। আহা, কী সুন্দর পরিবেশ!

কিন্তু এমন মনোহারী পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে তো! তবে সেজন্যে ওরা দুই ভাই-বোনকে মোটেও দায়ী করা যায় না। দায়ী ওই লণ্ঠন। যা কিনা আলো দিচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু ওটার যে হাতল, তা কেন যেকোনও একদিকেই শুধু থাকবে? আর যার দিকে থাকবে, তার পড়াশোনায় বুঝি অসুবিধে হবে না?

খুব হবে।
তাই তো ওরা কেউ-ই ওটা নিজের দিকে রাখতে চাইতো না। মিনিটে মিনিটে এ ওর দিকে আর ও এর দিকে ওটাকে পাঠিয়ে তবেই বইয়ে চোখ রাখার ফুরসৎ খুঁজতো। এই ফুরসৎ খোঁজাখুঁজির মধ্যেই লেগে যেতো খিটিমিটি। খিটমিটি থেকে হাতাহাতি। অতঃপর সুযোগ বুঝে এ ওর পিঠে গুমগুম কিল। ব্যস, লেখাপড়ার বারোটা।

কিন্তু এই অবস্থা তো আর চলতে দেয়া যায় না! বড়রা এর একটা বিহিত না করে ছাড়বে কেন? হাতলটিকে বেশ করে কাপড় পেঁচিয়ে, পোক্ত করে, মাঝ বরাবর তুলে রাখা হলো। ওটি যেন আর কোনওদিকে হেলে পড়ে কারও লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে।
পারেনি।

তবে তাই বলে কী দুই ভাই-বোনের আর কখনও খিটিমিটি হয়নি? হবে না কেন?
যতদিন শৈশব-কৈশোর, ততদিন খিটিমিটি। ততদিন মিষ্টি-মধুর ঝগড়া। ততদিন শুধু বড় হতে চাওয়া…

 

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031