গল্প

হাসপাতাল

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

-উদয় চক্রবর্ত্তী

প্রবল ঝড়, বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সুমিত অফিস থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছে। একটা বন্ধ দোকানের শেডের নীচে দাঁড়ালো। বৃষ্টির তেজ ভীষণ। ভিজে যাচ্ছে। পাশে গলির মুখে একটা বাড়ি। লোহার গেট খুলে গাড়িবারান্দার নিচে গিয়ে দাঁড়ালো। এবার বৃষ্টির ছাট তেমন লাগছে না।
হঠাৎ বাড়ির দরজা খুলে এক বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন “এখানে দাঁড়িয়ে কেন?”

অনুমতি ছাড়া গ্রিলের গেট খুলে ঢুকেছে, তাই একটু আমতা আমতা করে বললো “খুব বৃষ্টি, একেবারে ভিজে গেছি, তার উপর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।”
বৃদ্ধ বললেন “ওহ, তুমি ভিতরে ঢুকে বসতে পারো।” সুমিতের ইচ্ছে ছিল না, তবু রাজি হল।
ভিতরে দেখলো- বিরাট হল ঘর। ড্রয়িংরুম। সাজানো। বসার উঁচু গদির সোফা, টিভি ইত্যাদি এত বড় বাড়িতে যা যা থাকে। সুমিত দরজার কোণে দাঁড়িয়ে রইল। ভদ্রলোক দরজা বন্ধ করে সোফায় বসলেন। পরিবারের আরো কয়েকজন মিলে সন্ধ্যার খাবার খাচ্ছিলেন। একটু পরে বললেন “ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? সোফায় এসে বস।”

– Sorry Sir, আমার জামা কাপড় ভিজে গেছে। আমি মেঝেতে বসছি”।
ভদ্রলোক হাক দিলেন “রতন একটা প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে যা”।

সুমিত বসলো। দোতলা বাড়ি। লোকজনের চলাফেরা দেখছে। চাকর রতন এক কাপ চা দিয়ে গেল। সুমিত অনাহুত সামান্য একজন সরকারি কর্মচারী, এতটা খাতির সে আশা করেনি। ভদ্রলোক আলাপ শুরু করলেন

“কি নাম?”
-সুমিত মিত্র।
-ও, কায়েত? তা কোথায় থাকা হয়?
-ভবানীপুর।
-এই লোকডাউনে বাইরে বেড়িয়েছ কেন? পুলিশ ধরে নি?
– না।
– কি করা হয়?
-চাকরি।
– কোথায়?
-M R Bangur Hospital.
ভদ্রলোক তরাং করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীর গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন “বেড়িয়ে যাও, বেড়িয়ে যাও। আমার ঘরে ভাইরাস ঢোকাতে এসেছ?” বাড়ির লোক জড়ো হল। তড়িঘড়ি রতন এসে দরজা খুলে দাঁড়ালো। সুমিত অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বেরিয়ে পড়লো। দড়াম করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

বাইরে তখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে চলেছে।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031