অনু গল্প

ধর্ষকের ছেলের বিয়ে

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

আজাদ সাহেবের একমাত্র মেয়ে যুথি।বিয়ের কথা প্রায় সব ঠিকঠাক।ছেলের পরিবার লন্ডন থাকে।ছেলে বাংলাদেশের হলেও জন্মের দুই বছর পরই তার বাবা মা লন্ডন চলে যায়।সেখানে তার লেখা পড়া। সফটওয়্যার  ইঞ্জিনিয়ার। ওরা দেশে এলেই হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। বাবার আদরের কন্যা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালায় থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স এ পড়ছে।

অনেক ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিবেন। ঠিকহলো সেনাকুঞ্জেই হবে আনুষ্ঠিকতা, হাজার  মানুষের  আয়োজন। টেলিফোনে সব কথাবার্তা ঠিকঠাক হয়েছিল। বিয়ের সপ্তাহখানেক আগেই বরপক্ষ দেশে আসবে।এক মাসের জন্য। এরই মাঝে সব কেনাকাটা, সব আত্মীয়দের দাওয়াত দেয়া। কত কাজ। আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ।

বরপক্ষ চলে এলো দুইদিন হলো।হলুদের অনুষ্ঠানটিতে বেশ জাকজমক ভাবে কনের বান্ধবীরা নাচ গানে করে যথারীতি মহা ধুমধামে ভীষণ আনন্দ আর  হইচই করলো।

পরদিন বিয়ে। সব আত্মীয় স্বজন আসতে শুরু করেছে। তাই মেয়ের মা বাবা আগেই সেনাকুঞ্জে অবস্থান করছে। কনে তখনো পার্লার থেকে এসে পৌঁছেনি। বরপক্ষ চলে এসেছে। বরের বাবা মাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন কন্যার বাবা।

হঠাৎ মেয়ের মা শুনতে পেলেন আত্মীয়দের কিছু কানাঘুঁষা।

জটলা করে কিছু মহিলা বলছেন একই রকম না হলে সম্পর্ক করে কেমনে? ছেলের বৌকে ও নিজের বৌ মনে করে বাপ ছেলে দুইজনই ভোগ করবে।মেয়ের মা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কি শুনছেন তিনি!

নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না।

কিছুক্ষণ পর মেয়ের মা জিজ্ঞেস করলেন আপনারা কিছু জানলে আমায় খুলে বলেন এখনো সময় আছে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট হোক মা হয়ে আমি তা চাই না। ছেলে লন্ডন থাকে তাই তাদের সম্পর্কে বেশী খোঁজ খবর আমরা নিতে পারিনি।

তখন এক মহিলা বলে উঠলেন এই লোক মানে ছেলে বাবা গ্রামের মেয়েদের ধর্ষন করতো। তখন তার এক সন্তান ছিল। তারজন্য গ্রামের মেয়েদের বেশী পড়ালেখা করানো যেতো না। একবার এক মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সমাজের বিচারে তাকে গ্রামছাড়া করা হয়। তারপর তারা গ্রাম ছেড়ে শুনেছি নানার বাড়ী চলে যায়।এরপর কবে, কখন লন্ডন প্রবাসী হলো তার খবর আর কিছুই জানি না। এখনো চেহারা আগের মতই আছে তাই চিনতে কষট হয়নি। শুনে সংগে সংগে মেয়ের মা তার স্বামীকে বিষয়টি জানান।

শুরু হলো হইচই। মেয়ের বাবা ছেলের বাবাকে ডাকলেন। তাদের সেই গ্রামবাসী অনর্গল সব ঘটনা বলতে শুরু করেলে, এক পর্যায়ে বরের বাবা হাত জোড় করে বললেন, আমার ছেলেকে বিয়ে করাতে এসেছি আমি নই। আমার ছেলে তো কোন দোষ করেনি।

মেয়ের বাবা বললেন আপনার ছেলের তো কোন দোষ নেই ঠিক, কিন্তু ছেলের অনুপস্থিতিতে আমার কন্যা তো আপনার ঘরে নিরাপদ নয়। আপনার মত নারীর সম্ভ্রম লুন্ঠন কারীর কাছে কোন মেয়েই তো নিরাপদ নয়। আমি সারাজীবন দরকার হলে আমার মেয়েকে নিজের কাছে রাখবো। কিন্তু আপনার মত ধর্ষকের ঘরে বিয়ে দেব না।

বর মাথা নিচু করে সেনাকুঞ্জ থেকে বেরিয়ে গেলো।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031