গল্প

ফাগুনের ভালোবাসা

হাত-ধরাধরি করে এলো বসন্ত ভালোবাসা দিবস

-সাঈদা নাঈম

কিছু কিছু মানুষের অট্টহাসিতে পাখি পর্যন্ত উড়ে যায়। সৈকত ঠিক এমন করেই হাসে। ক্যাম্পাসে বসে এমন অট্টহাসি আর কেউ দেয় না। কে কি ভাবলো তাতে কিছু যায় আসেনা সৈকতের। ওর মতোই ও চলে।

এইতো সেদিন আমাকে এসে বলল, এই অল্পপানিতে পা ডুবিয়ে কি হবে? মৎসকন্যা হতে চাও?

আমি অবাক বিস্ময়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম কিভাবে!

সৈকত অবলীলায় উত্তর দিলো। জোরে নিঃশ্বাস নাও, ছাড়ো। এবার চোখ বন্ধ করো। দেখো সমুদ্রের নীল পানি। ওখানে একটি মৎস্যকন্যা ডুব দিচ্ছে আর উঠছে। কিছু একটা খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। ও জানে ও যা খুঁজছে তা হারিয়ে যায়নি, কোথাও আছে চুপটি করে। মৎস্যকন্যা খুঁজেই চলছে। হারিয়ে মানছে না।

সৈকত মাঝে জানতে চাইলো :
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?

হু। এমন একটা শব্দ সৈকত শুনতে পেল। এরপর আবার বলা শুরু করলো।

এবার একটু খেয়াল করে দেখো তো, মৎস্যকন্যার মুখটা দেখা যাচ্ছে কিনা? ও অনেক সামনে চলে এসেছে।

দেখতে পাচ্ছো? ওটা তুমি?

আবারও শুনতে পেল সৈকত, হু।

সৈকত এবার ওর ঐতিহাসিক অট্টহাসি দিয়ে ফেলল। আর মৎস্যকন্যা বাস্তবে ফিরে এলো।
এতক্ষণ ওর ঠিক মনে হচ্ছিল সমুদ্রের নীল পানিতে ডুব দিয়ে দিয়ে কিছু খুঁজছে। কি খুঁজছিল?

ভাবছে আবার আমোদিতও হচ্ছে। মৎস্যকন্যার স্বাদটুকু ও পেয়েছে।

কি ব্যাপার মৎস্যকন্যা, কি খুঁজছিলে?

আসলেই তো কি খুঁজছিলাম বলেন তো? আমি এমনভাবে কিছু ভাবিনি কখনও। কিন্তু এ মুহুর্তে মনে হচ্ছে, সত্যিই আমি কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছি।
ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

তাই? ওটা কাল বলবো, তুমি কি খুঁজছিলে। আজ বাড়ী যাও।

ঠিক তাই। বাদ দেন এসব। রূপকথার কাহিনীর মতো লাগছে সব। সামনে পরীক্ষা আর সমুদ্রে ভাসছি। যাচ্ছি আমি। কাল দেখা হবে।
সৈকত বলল, দেখা তো হতেই হবে, জানতে হবে না কি খুঁজছিলে?

বাদ দেন তো। ক্যাম্পাসে এলে এমনিতেই তো দেখা হয়। ও, ভালো কথা কাল পহেলা ফাল্গুন। সবাই সেভাবেই ড্রেস পরবে। জানেন তো, ছেলেরা কি পরবে?

জানি। সৈকত জানালো। ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।কাজ আছে।

পরেরদিন সকালবেলা পুরো ক্যাম্পাস যেন ফুলের বাগান। বাসন্তী, কমলা, হলুদ রঙের ড্রেসে সবাই। সুন্দর করে সেজেছে। স্যার, ম্যাডামদের জন্য ফুল নিয়ে এসেছে। কেমন একটা রঙীন উৎসবের পরিবেশ। বেশ ভালো লাগছে।

এমন সময় সৈকত পাশে এসে দাঁড়ালো।
কি ব্যাপার মৎস্যকন্যা, খুঁজে পেলে?
রাহা এমন ভাব করলো যেন জানেই না কি? অথচ কাল অনেক রাত পর্যন্ত ভেবেছে।
সৈকত আবারো বলল, পেয়েছো?

কি পাবো যেন বলেছিলেন?

ও পাওনি? আজ আবার যাবে নাকি ক্যাম্পাসের ঐ পুকুরপাড়ে?

আমি তো রোজই যাই। পা ডুবিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকি।

জানি তো, তাইতো বলেছি তোমাকে মৎস্যকন্যা।

কি খুঁজছিলে চলো দেখাই।

না, থাক্।

আহা! থাকবে কেন? চলো।

রাহা বলল, চলেন তাহলে, দেখেই আসি।

ছোট্ট একটা পুকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণদিকে রয়েছে। অনেক আগে থেকেই ছিল। এটার রক্ষনাবেক্ষনও ভালো করে করে কর্তৃপক্ষ। এ পুকুরেই রাহা প্রতিদিন বসে থাকে পা ডুবিয়ে। ও নদী খুব ভালোবাসে। ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো আরকি। ‘

কথা বলতে বলতে দুজনেই পুকুরপাড়ে এসে দাঁড়ালো। সৈকত বলল,

আজ আর পা ভেজাতে হবে না। আজ রঙে মন ভেজানো আছে। তুমি শুধু চোখ বন্ধ করে গতকালের সমুদ্রে ডুব দাও।

রাহা চোখ বন্ধ করে আছে। ওর মনে হচ্ছে ও সমুদ্রে গতকালের মতো কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। এবং খুঁজতে খুঁজতে ও সৈকতকে ওখানে দেখতে পেলো।এবং বুঝতে পারলো ও সৈকতকেই খুঁজছিল।

কি? কিছু দেখতে পেলে?

রাহা মিথ্যে করে বলল, না। চলেন যাই। সবাই ওখানে।

যাবো তো অবশ্যই, কি দেখলে বলে যাও।

কিছু দেখতে পাইনি।

পাওনি!

না।

আমার হাতটা ছুঁয়ে বলো। সৈকত হাত বাড়িয়ে দেয়। ওর হাতে একটি লাল গোলাপও আছে।
কি হলো, বলো?

রাহা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। যাই যাই করছে।

সৈকত বলল, হাতটা ছুঁতে এলেই গোলাপটা তোমাকে নিতে হবে। এটি তোমার জন্যই এনেছি।
আর আমি বলে দিচ্ছি, তুমি সমুদ্রে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলে। তাই না?

রাহা, লাজুক হাসে।

গোলাপটা নাও। খুঁজেতো পেলে আমায়। নাকি অন্য কেউ ছিল?

না। অন্য কেউ না। আপনিই ছিলেন।

এই, এক ইয়ার সিনিয়ার তোমার এতো আপনি আপনি করো কেন?

তাহলে কি বলবো?

এমন ব্যাকুল হয়ে গভীর সমুদ্রে সাথীকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলে। আর তাকে তুমি করে বলতে পারছো না?

ফাগুনের এই রঙীন দিনে, তোমায় দিলাম আমার জীবনের সবটুকু ভালোবাসা। গ্রহণ করবে কি এ ভালোবাসা?

রাহা সৈকতের হতে থেকে ফুলটি নিয়ে বলল,
এ হলো ফাগুনের ভালোবাসা।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031