মতামত

গণঅভ্যুত্থানের সূত্রে গাঁথা আমাদের স্বাধীনতা

ফজলুল হক, চিত্রসাংবাদিক

২৪ জানুয়ারি ২০২৪


১৯৪৭ পরবর্তী পাকিস্তান সরকার পূর্ব-পাকিস্তানের সাথে বৈশম্য মূলক আচরণ শুরু করে। পশ্চিম-পাকিস্তানী জান্তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ট পূর্ব-পাকিস্তানীদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে। ফলে পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র-জনতা স্বায়ত্ত্বশাসন দাবীর লক্ষ্যে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের পথ বেছে নেয়।

শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা ভিত্তিক ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচি গণঅভ্যুত্থানের পথ সৃষ্টি করে। ২০ জানুয়ারি শহিদ হন আসাদুজ্জামান আসাদ ৷ তারও আগে ১৫ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারিতে শহিদ হন যথাক্রমে সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং অধ্যপক ড.শামসুজ্জোহা। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিদের মুক্তি।

জনতার রুদ্ররোষে ২২ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

আসাদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে সারাদেশে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে। ২৪ জানুয়ারি ‘সান্ধ্য আইন’ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে, আন্দোলন দমনে ঢাকায় পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে নবকুমার ইন্সটিটিউশনের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও রিকশাচালক রুস্তম আলী নিহত হন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ায় পতন ঘটে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।

বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান । যে যাত্রা শুরু হয়েছিল আসাদের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। মতিউরদের জীবন দেয়ার মধ্যদিয়ে সেই গণঅভ্যুত্থান পূর্ণতা লাভ করে। শুধু ছাত্র বা রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না এই আন্দোলন । সর্বস্তরের মানুষের ত্যাগের ফসল ছিল সেদিনকার গণঅভ্যুত্থান।

আর সেই ধারাবাহিকতায় সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয়। পরবর্তীতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা; আলোচনার টেবিল ছেড়ে রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা, নির্বিচারে গণহত্যা। গভীর রাতে বন্দী করা হয় দেশের সংখ্যাগুরু মানুষের নেতাকে। গ্রেফতার হবার আগে শেখ মুজিবের বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান।

প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের সহযোগীতায় দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় ৫৫ হাজার বর্গমাইলের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। বিশ্ব দরবারে পতপত করে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা। তাইতো বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি একটি ঐতিহাসিক দিন।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031