রকমারি

কতো স্বর্ণ আছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে?

হ্যালোডেস্ক

যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের স্বর্ণের ভল্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। বেশ আগে কর্তৃপক্ষ একবার এই স্বর্ণরাজ্য ভ্রমণের জন্যে আগ্রহী জনতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যদিও সৌজন্য স্মারক হিসেবে পকেটে পুরে নেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না! সম্প্রতি বিবিসির সাংবাদিক ফ্রাঙ্ক গার্ডনারের সঙ্গে বিশ্বের মানুষ আরেকবার ঘুরে দেখলো ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে স্বর্ণের ভল্ট। তবে নিরাপত্তা কড়াকড়ি এতোটাই বেশি যে অনেক কিছু চোখে দেখার সৌভাগ্য হলেও ক্যামেরায় ধারণ করার অনুমতি পাননি তিনি।

সবার মনে একই প্রশ্ন:
কতগুলো স্বর্ণবার আছে ভল্টে? চার লাখেরও বেশি স্বর্ণবার আছে এখানে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তা সংগ্রহ করা হয়েছে। যা দিয়ে মোটামুটি আইফেল টাওয়ারের সমান ৪৬টা টাওয়ার বানানো সম্ভব। আবার চাইলে বানিয়ে ফেলা যাবে একশ কোটি বিয়ের আংটি। এমনকি গোটা যুক্তরাজ্য সোনা দিয়ে মুড়ে ফেলা যাবে। তাও আবার দুই একবার না ছয় ছয়বার। অবশ্য এসব স্বর্ণের অধিকাংশই বিভিন্ন ব্যাংকের। ব্যাংকের জাদুঘরে প্রদর্শিত দুটি রোমান স্বর্ণবারসহ এর সামান্য অংশই সরকারের এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের।

সিনিয়র ম্যানেজার এন্ড্রো গ্রিস জানান, এক একটি স্বর্ণবারের ওজন ১৩ কেজি। বর্তমান বাজারে দাম ৪ লাখ ৭৫ হাজার ইউরো। পুরো ভল্টে আছে প্রায় ১৯ হাজার ৪০০ কোটি পাউন্ড মূল্যমানের স্বর্ণ। বেশিরভাগ স্বর্ণবার ট্রাপিজিয়াম আকৃতির। ব্যাংকটি মাটির উপরে নির্মাণ করায় তার একটা নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা রয়েছে। এ কারণেই স্বর্ণবারগুলোর এমন আকৃতি দেয়া হয়েছে বলে জানান ভল্টের কর্মকর্তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা স্বর্ণবার আবার ইটের আকৃতির। নিউইয়র্কের ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাংক স্তূপাকারে রাখার জন্য এমন আকৃতি বেছে নেয়। এতে করে একটার উপরে একটা স্বর্ণবার সাজিয়ে রাখা সহজ হয়।

আজকের এই ভল্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমানবাহিনীর স্টাফ ক্যান্টিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন লন্ডনের সব স্বর্ণ পাঠানো হয়েছিলে অটোয়াতে ব্যাংক অব কানাডার ভল্টে।

হলিউডের বিখ্যাত ক্ল্যাসিক কমেডি সিনেমা ‘দ্য লেভেন্ডার হিল মব’ এ ভল্ট থেকে স্বর্ণ চুরি করা গেলেও ১৬৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড ব্যাংকের ভল্ট থেকে কোনো স্বর্ণ চুরি যায়নি।

শোনা যায়, ১৮৩৬ সালে এক সুইপার ভল্টের নিরাপত্তা ত্রুটির কথা কর্তৃপক্ষকে জানান। সততার পুরস্কার হিসেবে তাকে ৮০০ পাউন্ড দেয়া হয়েছিল। যদিও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কখনো কিছু বলেনি। নথিপত্রেও এর প্রমাণ নেই। তবে ওই সময় ওই নামে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী ছিলেন এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

টাকা ছাড়াও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে ইতিহাসের স্মারক হিসেবে আরো অনেক কিছু আছে। এটি নির্মাণের সময় এখানে রোমান মোজাইক (রঙিন নকশার শিলা) পাওয়া যায়। ১৮০৫ সালে এখানে একটি উইন্ড ডায়াল (বাতাসের গতি প্রকৃতি মাপকযন্ত্র) স্থাপন করা হয়। পোর্ট অব লন্ডন অভিমুখী জাহাজের গতি অনুমান করতে এটি ব্যবহার করা হতো। এছাড়া ব্যাংক চত্বরের বাগানে রয়েছে বেশ কয়েকটি তুঁত গাছ। তুঁত গাছের বাকল থেকে তৈরি কাগজে প্রথম চীনা ব্যাংকনোট বানানোর ইতিহাস স্মরণে এসব গাছ লাগানো হয়েছে।

১৯৩০ এর দশকে ব্যাংক ভবন নতুন করে নির্মাণ করতে গিয়ে অন্যতম স্থাপত্যবিদ স্যার জন সোনের কিছু মাস্টারপিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে একটি ছিল বাগানে রক্ষিত বিশাল আকৃতির একটি কফিন। পরে জানা যায়, এটি ব্যাংকের সাবেক করণিক উইলিয়াম জেনকিনের দেহাবশেষ। ওই সময় তাকে বলা হতো ‘ব্যাংক জায়ান্ট’। তার উচ্চতা ছিল ৬ ফুট সাড়ে ৭ ইঞ্চি। ১৭৯৮ সালে মৃত্যু পর ব্যাংকের পরিচালকরা মিলে তাকে লন্ডনের সবচেয়ে নিরাপদ সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংক চত্বরে সমাধিস্থ করার অনুমতি দেন। কারণ তার মরদেহ চুরি যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। পরে ভয় কেটে গেলে লন্ডনের বাইরে নানহেড সমাধিক্ষেত্রে তাকে আবার সমাধিস্থ করা হয়।

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031