তরঙ্গটুডে

গ্রীক মিথোলজির মহাকাব্যিক কাহিনী নিয়ে মুভি- “ট্রয়”

হ্যালোডেস্ক

ট্রয় মুভির পিছনের কথা
ট্রয় যুদ্ধের ইতিহাসটা ভালোভাবে জানা হয়ে যাবে ট্রয় মুভিটি দেখার মাধ্যমে। হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াড অনুসারে নিমির্ত হয়েছে ট্রয় মুভিটি। মুভিটি দেখলে মনে হবে দারুণ কিছু একটি উপভোগ করছি।

ট্রয় (Troy) ২০০৪ সালের ১৪মে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি মার্কিন চলচ্চিত্র যার বিষয়বস্তু ট্রয়ের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মহাকবি হোমার রচিত ইলিয়াডের সাথে যেমন এর সাদৃশ্য আছে, তেমনি আবার অনেক উপাদানই ভার্জিলের এনিড থেকে নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী থেকে ছবির কাহিনীর পার্থক্য আছে। পোশাক সজ্জার জন্য এটি একাডেমি পুরস্কার মনোনয়ন লাভ করে মুভিটি। ট্রয় দেখা শুরু করলে আপনি ধীরে ধীরে ডুবতে থাকবেন মহাকাব্যিকতার গহীন মায়ায়!

ট্রয় মুভি নির্মাণে যারা ছিলেন
মুভিটিতে পরিচালক ছিলেন ভোল্‌ফগাংক পিটারসেন ও প্রযোজকঃ ভোল্‌ফগাংক পিটারসেন, ডায়ানা রুথবান, কলিন উইলসন। রচয়িতাঃ ডেভিড বেনিওফ, শ্রেষ্ঠাংশেঃ ব্র্যাড পিট, এরিক বানা, অরল্যান্ডো ব্লুম, ডিয়ান ক্রুগা, ব্রায়ান কক্স, শন বিন, ব্রেন্ডান গ্লিসন, পিটার ও টুল। সুরকারঃ জেমস হরনার। চিত্রগ্রাহকঃ রোজার প্র্যাট। সম্পাদকঃ পিটার হোনস। প্রযোজনাঃ হেলেনা প্রোডাকশন। কোম্পানিঃ প্ল্যান বি এন্টারটেইনমেন্ট। পরিবেশকঃ ওয়ার্নার ব্রস। ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ১৪ মে ২০০৪। দৈর্ঘ্যঃ ১৬২ মিনিট। দেশঃ মাল্টা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র। ভাষাঃ ইংরেজি। নির্মাণব্যায়ঃ $১৭৫ মিলিয়ন, $১৭৭ মিলিয়ন(Director’s cut) আয়ঃ $৪৯৭.৪ মিলিয়ন।

মুভির কাহিনী সংক্ষেপ
স্পার্টার রাজার স্ত্রী হেলেনকে নিয়ে পালিয়ে আসে ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস। অথচ প্যারিস স্পার্টার রাজার অতিথি হয়ে ওই রাজ্যে গিয়েছিল। ওখানে থেকে রাজার বউ হেলেনকে নিয়ে পালিয়ে আসাটা রীতিমত দুঃসাহসিক কাজ ছিল। হেলেন দেবতাধিরাজ জিউসের কন্যা। গ্রীক ও রোমান পুরাণের সর্বাধিক আলোচিত নারী চরিত্র এই হেলেন। ভালোবাসা ও জিঘাংসা, সৃষ্টি ও ধ্বংস, রাজকীয় বিশ্বাস আর শঠতা যে চরিত্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে চলেছে সহস্র বছর ধরে। অনন্য অসাধারণ অনুপম সৌন্দর্য যাকে বারবার পরিণত করেছে রহস্যে ঘেরা মোহময় এক মানবীতে!

 

এই মুভিতে পরস্পর বিরোধী দুই বীর চরিত্র অ্যাকিলিস ও হেক্টর। হেক্টর এমন একটা চরিত্র যে তার ভাইয়ের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। ভাইকে বাঁচাতে খোলা তলোয়ারের নিচে বুক পেতে দিতে পারে। অ্যাকিলিস যখন একা একা চলে আসে হেক্টরকে বধ করার জন্য তখন হেক্টর সকল যোদ্ধাকে আক্রমণ করতে নিষেধ করে তার সাথে একা একা লড়াই করে। এর চাইতে সাহসী আর কিই বা হতে পারে! অন্যদিকে অ্যাকিলিস ট্রয় আক্রমণ করার জন্য অন্য যুদ্ধ জাহাজের জন্য অপেক্ষা না করে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রেমিকার চোখের দিকে চেয়ে যে অ্যাকিলিস যুদ্ধ স্থগিত করতে জানে সে অ্যাকিলিসই তার অনুগামী ছোট ভাই [কাজিন] এর মৃত্যুতে একাই চলে যায় ভাইয়ের হত্যাকারী হেক্টরকে হত্যা করতে। তার সাথে সহকারী যেতে চাইলেও সে নেয় না। এ যুদ্ধ শুধুই তার একার!

মৃত্যুর আগে হেক্টর তার স্ত্রীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে আপ্রাণ চেষ্টা করে তা দেখে সব দর্শকের মনেই বিষণ্ণতা ভর করে। এক সময় মনে হয় স্ত্রী ও সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতেই সে যুদ্ধ করছে।

হেলেনকে নিয়ে যখন ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস পালিয়ে এসেছিল, তাকে উদ্ধার এবং গ্রীসের সম্মান রক্ষার্থে প্রায় ১ হাজার জাহাজ নিয়ে ট্রয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় গ্রীক-যোদ্ধারা। জাহাজ থেকে সর্বপ্রথম নেমে আসেন প্রসিদ্ধ গ্রিক বীর অ্যাকিলিস। নেমেই যুদ্ধ শুরু করেন অ্যাকলিস ও তার সঙ্গীরা। প্রথম যুদ্ধেই ট্রয় নগরীর বন্দর দখল করে নেয় গ্রীকরা। এভাবে টানা প্রায় ১০ বছর বন্দর ও রাজ্য অবরোধ করে রাখে গ্রীক যোদ্ধারা। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে নিহত হয় অ্যাকিলিসের ভাই উইরোরাস, প্যারিসের বড় ভাই ট্রয় বীর হেক্টর ও উভয়পক্ষের নাম না জানা হাজারো যোদ্ধা!
যুদ্ধে সহজে জয়লাভ না করতে পেরে গ্রীকরা আশ্রয় নেয় প্রতারণার। জন্ম নেয় ইতিহাসের এক জঘন্যতম প্রতারণার প্রতীক ট্রোজান হর্স। কাঠের ঘোড়ায় লুকিয়ে থাকা গ্রীক সৈন্যরা রাতের আঁধারে বেরিয়ে এসে ট্রয় রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে লকলকে আগুন গ্রাস করে নেয় ট্রয় নগরী। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় এককালের সাজানো সুন্দর ট্রয়নগরী!

ইতিহাস আর মিথোলজি, উভয় মাধ্যমই ট্রয় নগরী ধ্বংসের জন্যে হেলেনকেই দায়ী করে থাকে।

অ্যাকশন ট্রাজেডির এই সিনেমাতে হেক্টরই সবচেয়ে বেশি মানবিক। রাতের আঁধারে বিপক্ষ দলকে আতর্কিত হামলা করতে সে মানা করেছিল। তার মতে এমনটা করা সাহসী যোদ্ধার পরিচয় হতে পারে না। একমাত্র কাপুরুষরাই পারে এমন হীনকাজ করতে। অন্যদিকে অ্যাকিলিস কিন্তু রাতের আঁধারে গণহারে ট্রয়বাসীদের হত্যা করে, এমনকি শিশুও বাদ পড়ে না তার এই হত্যাযজ্ঞ থেকে।

আর অপর দিকে হেক্টরের স্ত্রী সন্তানের প্রতি মানবিক ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। একই রকম ভালোবাসা তার দেশের প্রতিও।

ট্রয় মুভির শেষ দৃশ্য যেমনটা
সিনেমার শেষের দিকে প্যারিসের ছোঁড়া তীর পায়ের গোড়ালিতে লেগে অ্যাকলিসের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর এমন ক্ষণে সে তার প্রিয়তমর উদ্দেশ্যে বলে “You gave me peace in a lifetime of war”। বাকীটা শুধু মৃত্যু আর ধ্বংস! এমন মহাকাব্যকে মুভির ভেতর দিয়ে ঠিক ফুটিয়ে তোলা যায় না। তবুও নির্মাতা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন মুভির মাধ্যমে ইতিহাসকে যথাযথভাবে উপস্হাপন করতে। ভালোলাগা এই মুভিটি দেখলে জানতে পারবেন ট্রয় নগরীর ধ্বংসের ইতিহাস।

ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031