ভ্রমন

সময় নিয়ে আসতে পারেন সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি

যাদুঘরে ঢোকার প্রধান গেইট

রফিকুল ইসলাম সবুজ, সিরাজগঞ্জ:

পবিত্র ঈদ উল আযহা মুসলিম উম্মার ২য় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। ত্যাগের মহিমায় বিশ্বব্যাপী ঈদ উল আযহা পালিত হবে। এর পর ছুটির ফাঁদে পরেছেন সবাই। ঈদের এই ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন শাহজাদপুরে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়ি। স্থানীয়রা এটাকে কাছারি বাড়ি বলে থাকেন।

 

চোখ জুড়িয়ে যাবে বড় বাগান এবং নানা রঙের ফুল বাগান দেখে

কাছারি বাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত:
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি। শাহজাদপুরের সঙ্গে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তার মানস গঠনেও এ অঞ্চলের প্রভাব অনস্বীকার্য।

১৯৪০ সালে ‘বাণী সম্মেলনীতে তিনি স্বহস্তে লিখে পাঠান সে কথা। বর্তমানে কাছারি বাড়ীটি আধুনিকতায় বাহারী গাছ ও ফুলের সমারোহে সুসজ্জিত করার ফলে পর্যটকদের দারুন ভাবে আকর্ষিত করছে। শাহজাদপুরের পৌর শহরের দ্বাড়িয়াপুর মৌজার শাহজাদপুর কাপড়ের হাট সংলগ্ন উপজেলা পরিষদের উত্তরে প্রায় দশ বিঘা জমির ওপর পুরো কাছারি বাড়ির অবস্থান। স্মৃতি যাদুঘর হলুদ রঙের দোতলা ভবন। ভবনের দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার, প্রস্থ ১০.২০ মিটার, উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার। প্রতি তলায় সাতটি করে ঘর। উত্তর ও দক্ষিণে প্রশস্থ বারান্দা। কুঠি-ভবনের পাশেই কাছারি বাড়ি, মালখানা পুরোটাই ‘রবীন্দ্র -কাছারি। জানা যায় ১৯৩৯ সালে তের টাকা দশ আনায় জমিদারি কিনে নেন কবির পিতামহ দারকানাথ ঠাকুর। তার আগে এখানে ছিল নীলকরদের নীলকুঠি। তবে নীলকুঠি বর্তমান পরিত্যাক্ত।

ভিতরে ঢুকলেই -প্যাঁচানো সিঁড়িটি যেন সবাইকেই উপরে ওঠার আহবান জানায়

১৮৯০ সালে লন্ডন থেকে ঘুরে আসার পর রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ওপর জমিদারি তদারকির ভার ন্যস্ত হয়। কাছারি বাড়ির পেছন দিকের গেইটি বর্তমানে প্রধান গেইট করা হয়েছে। কাছারি বাড়ির গেটে দাঁড়ালেই চোখ জুড়িয়ে যায়, বড় বাগান এবং নানা রঙের ফুল, বাগানের পরই তার হলুদ রঙের দোতলা কুঠি। নিচের তলা জুড়ে রবীন্দ্র নাথের নিজের বিভিন্ন ছবি, তার আঁকা ছবি এবং তার হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির পাতার অংশ বাধাই করে দেয়ালে টানানো রয়েছে। উত্তরদিকের বারান্দার একেবারে পশ্চিমে সিঁড়িঘর। গোল-প্যাঁচানো সিঁড়িটি যেন সবাইকেই উপরে উঠার জানান দেয়। ওঠার সময় পশ্চিমে একটি জানালা। সিঁড়ির মুখেই দুটি দরজা একটি দরজা খোলা শুরুতেই একটি পালকি। ঠাকুর বাড়ির পালকি। বংশ পরম্পরায় ব্যবহার হয়েছে এটি, পড়ার টেবিল, চিঠি লেখার ডেস্ক, আলনা, গোল টি-টেবিল। এরপর এঘর থেকে সেঘর। নানারকম আসবাব-তৈজষপত্র বেতের চেয়ার, বড় ড্রেসিং টেবিল, চিনা মাটির ছাকুনি, টেবিল বেসিন, আলনা, দেবতার আসন, বড় টেবিল, শ্বেত পাথরের গোল টেবিল, ইজি চেয়ার, পিয়ানো, কেতলি, সসপ্যান, ফ্রাইপ্যান, কাটা চামচ, চিনা মাটির ফুলদানি, ডিস, টব, জগ, জমিদারি মনোগ্রাম ৭ টি, বালতি, কেরোসিনের বাতি, ঘণ্টা ট্রে, বাতির চিমনি ইত্যাদি।

প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ শত দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন কবির কাছারি বাড়িতে। ১৯৯৬ সালে এই কাছারি বাড়ীকে পরিছন্ন করে সরকার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে সংরক্ষণের উদ্দ্যোগ নেয়। এবং ১৯৯৯ সালে কাছাড়ি বাড়ীর পশ্চিম আঙ্গিনায় ৫০০ আসন বিশিষ্ট উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে নান্দনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণ করে। প্রতি বছর ২৫, ২৬ ও ২৭ বৈশাখ কবির জন্মজয়ন্তী সরকারীভাবে উদযাপন করা হয় নানা অনুষ্ঠান মালার মাধ্যমে। এ উপলক্ষে ৫ দিন ব্যাপী বসে মেলা। এসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি ভক্তরা ভীড় করে কবির কাছারি বাড়ীতে।

যেভাবে যাবেন:
সিরাজগন্জ রোড থেকে শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালেই চোখে পড়বে কবিগুরুর ভাসকর্য। ওখান থেকে রিক্সাযোগে অথবা গাড়ি যোগে সরাসরি কবি গুরুর কাছারি বাড়িতে যাওয়া যায়। তবে চলাচলের সুবিধার্থে দিলরুবা বাসস্ট্যান্ড হয়ে আসতে পারেন।

যাদুঘর পরিদর্শনের সময় সূচীঃ মঙ্গলবার-শনিবার সকাল ১০টা হতে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে ১: ৩০ পর্যন্ত বিরতি,
শুক্রবার সকাল১০টা থেকে দুপুর১২: ৩০ পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত।

সাপ্তাহিক ছুটিঃ রবিবার পুর্নদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে, অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে।

প্রবেশঃ
টিকেটমুল্য,- দেশি পর্যটক ২০ টাকা এবং সার্কভুক্ত বিদেশী পর্যটকের টিকিট মুল্য ১০০ টাকা, কিন্তু সার্কের বাইরের বিদেশী পর্যটকের টিকিট মুল্য ২০০ টাকা। এক টিকিটে সারাদিন কাচারিবাড়ি পরিদর্শন করার সুযোগ আছে।

হাতে কিছুটা সময় নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি।

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30