গল্প

“জাগ্রত বোধ”

সাময়িকী : শুক্র ও শনিবার

২৯ ডিসেম্বর ২০২২


-সুনন্দা শিরিন

পরনের শাড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে বিরক্ত মুখে তাকায় নূরী হঠাৎ আসা গাড়িটার দিকে। অনেক বেশি বৃষ্টির কারণে ভাঙ্গা রাস্তার জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে। সেই জমা পানিই গাড়ির চলন্ত চাকায় ভিজিয়ে দিয়ে গেলো তাকে। গাড়িটা এসে থামলো একেবারে তাদের গা ঘেঁষে। সুন্দর সুঠোম দেহের অপরূপা এক সুন্দরী গাড়ি থেকে নেমে নিজের বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে গেলো ভেতরে। যেনো আসমানের পরী মাটিতে এসে পরেছে। নীলরঙা শাড়ী, নীল ব্লাউজ, কোমর ছোঁয়া খোলা চুল। মানুষ এতো সুন্দরও হয়!

কি কও গাড়ি থিকা যে নামলো তারে চিনোনা তুমি? আরে ঐযে, অই-ইতো হেই মাইয়া যে বছর কয়েক আগে স্বামীরে ডিভোর্স দিয়া আইয়া নতুন সংসার পাতছে। আরে জামাইডার নাইলে একটু দোষই আছিল। হেইর লাইগ্যা চইল্যা আবি! সহ্য করতে পারলিনা! তুই না বাঙালি মাইয়া? উচিৎ আছিল মাডি কামরাইয়া থাহুনের। কি এমন দোষ আছিল, না হয় একটু চরিত্র খারাপ। অন্য মাইয়ার দিকে নেশা। একটু না হয় জুয়াই খেলে। আর মাইরের কথা? হেইডা কোন জামাই নেশা কইরা বৌরে না পিডায়? হেইর লাইগ্যা সোনার সংসার ফালাইয়া চইল্যা আবি!

আচ্ছা এতোক্ষণ হুনলাম। এহন কওছেন দেহি, তুমি নিজে অইলে কি করতা? মাইনা নিতা? আচ্ছা হেইডা থাক। তোমার বিয়া দেওয়ান্যা মাইয়াডা আইজ ছ’য়মাস ধইরা তোমার বাড়ি পইরা ক্যান? ক্যান হ্যারে জামাইর বাড়ি পাঠাও নায়? হুনছি জামাই হ্যারে জ্বালায়। মারে খুউব। কি হইলো কতা কও? চুপ কইরা আছো ক্যান?

কি কমু জরি? তুই আইজ আমার চোখ খুইল্যা দিলি। এমন কইরা তো ভাবি নাই?

ভাবতে হয় গো ভাবতে হয়। এই আমারে দেহ না, এই কালি সন্ধ্যার সময় বৃষ্টিতে ভিজ্জা ভিজ্জা দোকানে যাইতাছি কুপির তেল আনতে। ভিজতাছি সংসারের প্রয়োজনে তাতে কোনো দোষ নাই। কিন্তু কাইল বিকালে সব কাজ শ্যাষ কইরা যহন বৃষ্টি দেইখা পাগল হইয়া ছাদে গেলাম মনের আনন্দে ভিজতে তহন শুনতে হইলো “এই বুইড়া বয়সেও এতো ঢং, এতো আনন্দ কিসের? তুমি না চাইর বাচ্চার মা? তোমার কি এগুলা সাজে?”
নারে সাজে না। একটুও সাজে না। আমি যে চাইর বাচ্চার মা! আমার হাসন সাজে না, আমার আনন্দ সাজে না, আমার উচ্ছলতা সাজে না, আকাশ দেখা সাজে না, আমার বৃষ্টিতে ভেজা সাজে না। একদম সাজে না।

কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ পথচলা থামিয়ে দিলো নূরী। আকাশ কেঁদেই চলছে অবিরত। বৃষ্টি থামার লক্ষন নেই কোনো। হাতে ধরা হারিকেনের আলোটা ভেজা রাস্তা জুড়ে। তার কিছুটা আলো এসে জরীর চোখে মুখে ছুঁয়ে কি অদ্ভুত এক মায়াবী রুপ সৃষ্টি করেছে। এ যেনো সম্পূর্ণ অচেনা এক জরী। এর সাথে আগে কখনো পরিচয় হয়নি নূরীর।

জরি, তোর মনে এতো কষ্ট! কোনো দিনতো বুঝতে দ্যাস নাই! এতো অপূর্ণতা লইয়া থাহছ ক্যামনে!

আরে না কষ্ট না। শুধু মাঝে মইধ্যে ভাবি, সমাজের পরচর্চা নিয়া ভাবা এই মানুষ গুলার কথা। এরা একটু হাসতে দেখলেই খারাপ বইলা সমালোচনা শুরু করে। কারো লগে চা খাইতে দ্যাখলে চরিত্র ধইরা টান দেয়। কিছু আটকায় না মুখে। অথচ খোঁজ নিলে জানতে পারবা, এগোই দরজায় কড়া নাড়ে নিত্য নতুন পুরুষ! অথচ তারা কিন্তু খুব পবিত্র। এইডা অইলো আমাগো সমাজ। আমাগো নিয়ম। আমাগো বোধের সম্পর্ক। মানুষ আর কয়দিন বাঁচে কও? একটু পরেই পরের নিশ্বাস নিতে পারুম কিনা তাই জানি না!
তাই কইতাছি, কে কবে বিয়া করলো, কে কবে ছাইড়া চইল্যা গেলো, এইডা তাগো কাছেই থাক। আমরা না হয় আমাগো সমস্যা লইয়াই ভাবি।

জরি, কি সুন্দর কইরা কতাগুলা কইলি! তর মতো সুন্দর কইরা যদি সবাই ভাবতো, সম্পর্কগুলা কতো সুন্দরই না হইতো! গাড়ির ঐ মেডামের সাথে একদিন কথা কমু। আর একটা জিনিস দিমু তারে। আমার প্রিয় একটা জিনিস।।

 

Add Comment

Click here to post a comment

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031