ঋতুর সাজ

বাঙালির জীবন রাঙাতে উপস্থিত বসন্ত

মডেল: মুক্তি লাবনী

হ্যালোডেস্ক

হৃদয়ে লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া

আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে, কত পাখি ডাকে’ এবং ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ রবীন্দ্রনাথের এই দুই পঙক্তি বাঙালি জীবনে জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক। কবি সুভাস মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজি বসন্ত’ এই অমর পঙক্তি আবার ফিরে এসেছে বাঙালির জীবনে। বছর ঘুরে প্রকৃতির নানা পরিবর্তন পেরিয়ে আবার এসেছে বসন্ত। বসন্তের আগমনে মানুষের মন আর প্রকৃতিতে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।

মানুষের মনে জাগছে আনন্দ-জোয়ার আর প্রকৃতি ধারণ করছে রূপলাবণ্যে ভরা মনোহর পরিবেশ। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে স্নিগ্ধ সবুজ নতুন কচি কচি পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠেছে রিক্ত বৃক্ষরাজি। প্রকৃতিতে বসন্তের সাজ সাজ রব শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে ফুলে ফুলে সজ্জিত প্রকৃতি জানান দিয়ে যাচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। শীতের রিক্ততা ভুলিয়ে ফাগুন আগুন নিয়ে বাঙালির জীবন রাঙাতে উপস্থিত হয়েছে। শীতের খোলসে ঢেকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম প্রকৃতির আদরমাখা স্পর্শে জেগে উঠেছে। পলাশ, শিমুলের প্রস্ফুটিত হাসিতে বনে লেগেছে আগুন রঙের খেলা। কোকিলের কুহুতানে মাতাল করতে এসেছে বসন্তরাণী সবুজ-শ্যামল বাংলায়।

এই বসন্তের আগমনে ঘুরতে আসতে পারেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসলে যা দেখবেন, এখানে এখন লাল, নীল, বেগুনী, হলুদ গোলাপী, সাদা, খয়েরী হরেক রঙের ফুলের সমাহার ও মিষ্টি সুবাস। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় যেন হয়ে উঠেছে আনন্দ সৌন্দর্যের এক স্বপ্নপুরী। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফুল, ফল, পাখি, প্রাকৃতিক জলাধার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির অমলিন ভাস্কর্য আর নান্দনিক অট্টালিকা থাকলেও বসন্তে প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য এখানে উজাড় করে দিয়েছে। নতুন কুঁড়িতে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষরাজি। ফলে বর্তমানে ঢাকায় ইট পাথরের চার দেয়ালে থাকতে থাকতে যারা হাঁপিয়ে উঠেছেন তাদের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস হতে পারে এক অনাবিল আনন্দ উপভোগের স্বর্গরাজ্য।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে ফুটে উঠেছে পলাশ-শিমুলের ডালে ডালে রক্তিম উচ্ছলতা। কোকিলের গান, ফুলের সুবাসে মুখর মৃদুমন্দ বাতাসের কোমল ছোঁয়া আন্দোলিত করছে শিক্ষার্থীদের মন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে ক্যাম্পাসবাসী ছিল অধীর প্রতীক্ষায়। নাচে-গানে, বর্ণিল সাজে বসন্তকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি। প্রকৃতির উন্মাদনার পাশাপাশি বসন্তকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণী ছাত্র-ছাত্রীদের মনে বিরাজ করছে নানা বৈচিত্র্যে অকারণ চঞ্চলতা, উতলা, মুগ্ধতা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্তের প্রকৃতির রূপ অন্যান্য সুন্দরতম স্থান থেকে আলাদা মনে হয়। সবার মধ্যে প্রকৃতির এ রূপ সঞ্চারিত হয়ে হূদয়ে দোলা দেয়। চারদিকের সবুজ কুঁড়ির আধো ছায়া ও শুকনো পাবনের দোলায় হরেক ফুলের মিষ্টি সুবাস এবং শেষ দুপুর ও দিনের সায়াহ্নে ক্যাম্পাসের প্রকৃতিতে ভীষণ একটা ভাল লাগা কাজ করে। ঢাকার খুব কাছে সবুজ বৃক্ষরাজি ও ছোট-বড় অসংখ্য জলাধারে ঘেরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

জলাধারের পাড় ঘেঁষে ফোটা গোলাপী রঙের কাঞ্চন, রক্ত-কাঞ্চন, অমোক, জাপানি ক্যাসিয়া, উঁচু উঁচু ডিবিতে পলাশ, শিমুল, বিলুপ্তপ্রায় ফুলের মধ্যে লাল রঙের পারুল যা কিনা ঢাকার রমনা ছাড়া আর খুব বেশি একটা জায়গায় দেখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার, শিক্ষক অফিসার ক্লাবের সামনে ছোট ছোট লাল লাল টিপমা ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ক্যাম্পাসকে সুন্দরের ভেলায় ভাসিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। ফুলের সুবাসে মন-প্রাণ মুগ্ধতায় চঞ্চল হয়ে উঠেছে প্রতিটি প্রান্তর। এনেছে সুন্দরের জাগরণ, নতুনের জয়গান, নবীনের আগমন। চিরায়ত সুন্দরতম ভালোবাসা আর নব-যৌবনের প্রতীক হয়ে হাসি-আনন্দ-উচ্ছ্বাস হয়ে উপস্থিত হয়েছে। এমন দখিনা বাতাসের নতুন এ শিহরণ সবার হৃদয়ে অবিরাম ধারায় বয়ে যাক এমনটিই কামনা সবার।

Add Comment

Click here to post a comment

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30