রকমারি

বাবারা কীভাবে সন্তানের সাথে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে পারেন

মডেল: পার্থ ও প্রত্তয়

হ্যালোডেস্ক

সৃষ্টিকর্তার বিধানে সন্তানের সাথে মায়ের সম্পর্ক চিরন্তন। কিন্তু মায়ের পর পরই যার প্রয়োজন একান্ত গুরুত্বপূর্ণ, তিনি হলেন সন্তানের বাবা। জন্মের একটু পরই একটি শিশু চিনতে শুরু করে তার মাকে। জন্মের দুই মাসের মধ্যে সে তার বাবাকে সনাক্ত করতে পারে। বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান কি আরো কিছু আছে? এককথায় ‘না’৷ মায়ের পাশাপাশি বাবাও শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। তাই মায়ের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে শিশুর সখ্যতা গড়ে ওঠা অত্যন্ত জরুরী। মা-বাবার কণ্ঠস্বর, চেহারা এমনকি শরীরের গন্ধ প্রতিটি শিশুর মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে যা পরবর্তীতে শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এক ধরনের অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

যে কোন শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাবা হয়ে থাকে তার প্রথম আইডল। সেই সুবাদে শিশুরা প্রথম থেকেই তার বাবাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে থাকে। বাবার সাথে সুসম্পর্কের কারনে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ অনেক সুদৃঢ় হয়। তাই প্রতিটি বাবার-ই উচিৎ সন্তানের সাথে জন্মের পর থেকেই এক ধরণের এটাচমেন্ট বা বন্ধন তৈরি করার চেষ্টা করা যা বাচ্চার বেড়ে ওঠায় ছায়াসঙ্গী হয়ে সর্বদা সাহায্য করবে।

বাবার সঙ্গে শিশুর বন্ধন স্থাপনে যা করতে হবে
একটি শিশুর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে একজন বাবার কিছু করনীয় রয়েছে। প্রতিটি শিশুই তার বাবার প্রতি সর্বদা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পোষণ করবে এমন ভাবার তেমন কোন কারণ নেই। সকল বাবাকে তাই নিম্নবর্ণিত করনীয় সমূহ সঠিকভাবে মেনে চলা উচিৎ যাতে করে সন্তানের সাথে বাবার একটি অনুকূল সম্পর্ক প্রতিস্থাপন হতে পারে।

১. শিশুর যত্নে অংশ নেয়া
জন্মের পর পরই বাবাকে তার শিশুর যত্নে অংশ নিতে হবে যাতে করে প্রতিটি শিশুই তার প্রতি তার বাবার ভালোবাসার টান অনুভব করতে পারে। মায়ের পাশাপাশি শিশুর কাপড় বদলানো, পরিষ্কার করা, খেলা করা, গান শোনানো, গল্প বলা ইত্যাদি কাজে বাবারও সমান অংশগ্রহণ রাখতে হবে ।অনেকেই ভাবতে পারে শিশু অবস্থায় একটা বাচ্চা কতটুকুই বা বোঝে। কিন্তু শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, পরিবার পরিজন একটি শিশু খুব সহজেই আঁচ করতে পারে। মায়ের আদরের পাশাপাশি বাবার যত্ন এমনি প্রভাব ফেলে যে পরবর্তীতে বাবার সাথে শিশুটির খুব সহজেই বন্ধন তৈরি হয়ে যায়। শিশুরা শরীরের স্পর্শ খুব সহজেই অনুভব করতে পারে। তাই বাবাদের উচিত শিশুদের আলিঙ্গন করতে হবে, হালকা শরীর মালিশ করতে হবে। এসব করলে শিশুর সাথে খুব সহজেই এক ধরণের এটাচমেন্ট তৈরি হয়ে যায়।

২. ছেলে মেয়ের ভিন্নতা না করা
ছেলে হোক আর মেয়ে হোক, একজন বাবা হিসেবে প্রধান দায়িত্ব হল উভয়ের প্রতি সমান বিচার করা। মেয়ে সন্তান হলে মা দেখবে, ছেলে সন্তান হলে বাবা দেখবে এমন ধ্যান ধারনা রাখলে চলবে না। কোন অবস্থাতেই ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ করা যাবে না। মেয়ে সন্তান হলেও তার সাথে বন্ধন দৃঢ় করতে হবে বাবার।

৩. শিশুকে ভয় দেখানো যাবে না
কোন অবস্থাতেই শিশুদের ভয় দেখানো যাবে না। সন্তানের সামনে নিজেকে ভীতিকর চরিত্র হিসেবে স্থাপন করবেন না। বাবার ভয়ে যেন সন্তানেরা গুটিসুটি হয়ে না থাকে। শিশুদের এই দিকটা ভবিষ্যতে শিশুদের মনে দারুণ আঘাত হিসেবে কাজ করতে পারে। যতটুকু সম্ভব সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। শিশুরা যেন নিজের সকল কথা বাবার সাথে শেয়ার করতে পারে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলুন। অযথা চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে ঘরে অনাকাঙ্খিত পরিবেশের সৃষ্টি করবেন না।

৪. শিশুর সাথে সময় ব্যয় করা
শিশুর পছন্দমত খাওয়ার বা খেলনা কিনে দেয়ায় বাবার একমাত্র কর্তব্য নয়। শিশুদের জন্য যথেষ্ট পরিমান সময় বাবার অবশ্যই দিতে হবে। অফিস থেকে ফিরে এসে প্রথমেই বাচ্চার খবর নিতে হবে। তারপর বাচ্চার সারাদিনের কি কি ঘটনা ঘটেছে তার খবর নিতে হবে। শিশু কি কারণে বিরক্ত হয় তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। অফিসের কোন ঝামেলা ঘরে টেনে এনে বাচ্চার সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। সময় করে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুর কাছে গিয়ে তাকে গল্প শোনাতে হবে, ঘুম পাড়াতে হবে।

৫. কখনও শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না
বিনা কারণে ধমকানো বা শারীরিক নির্যাতন শিশুর কোমল মনে দীর্ঘমেয়াদি আঘাত ফেলে থাকে। তাই একজন আদর্শ বাবা হিসেবে কোন ভাবেই সন্তানের দুষ্টুমি বা অতিরিক্ত কান্না কাটিতে বিরক্ত হওয়া যাবে না। ঠাণ্ডা মাথাই যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। ভালোবাসা দিয়ে, আদর দিয়ে শিশুকে বোঝাতে হবে। বিভিন্ন হাসি ঠাট্টার মাঝে শিশুকে হাসাতে হবে। শিশুদের দুষ্টুমি সাময়িক। তাই অকারণে এসব ব্যাপারে মেজাজ খারাপ করা যাবে না।

৬. শিশুর পড়ালেখায় সাহায্য করা
শিশুর পড়ালেখাই যতটুকু সম্ভব সাহায্য করতে হবে বাবাকে। এতে করে সন্তানের সাথে বাবার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। পড়াশোনায় শিশুকে উৎসাহ দিতে হবে বাবাকেই। শিশুর অন্তর্নিহিত কোন মেধা বা গুন থাকলে তা প্রথম বাবার কাছেই ধরা পড়ে, তাই বাবার উচিৎ পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুর কিভাবে মেধা ও মননের বিকাশ ঘটানো যায় তার খেয়াল রাখা। শিশুর যেকোনো পর্যায়ের সাফল্যে বাবার প্রশংসা করতে হবে। শিশুদের মধ্যে প্রথম থেকেই প্রতিযোগিতা মূলক আচরণ তৈরি করবেন না।

৭. নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছা শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে না দেয়া
একজন বাবা হিসেবে নিজের জীবনের কিছু অতৃপ্তি কোনভাবেই শিশুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিশুকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না। প্রতিটি শিশুরই নিজের ইছে অনিচ্ছের একটা মূল্য রয়েছে। প্রতিটি বাবারই সেই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে এবং অনেক উদার হতে হবে। নিজে কি চাই সেটা না দেখে বাচ্চা কি হতে চাই, কি করতে চাই সেই দিক ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে বাবা তার বিবেচনা বা মতামত বাচ্চাকে বোঝাতে পারে। কিন্তু কখনও তা চাপিয়ে দেয়া যাবে না।

৮. অযথা কোন কাজে বাধা না দেয়া
শিশুদের সব সময় এটা করোনা, ওটা করোনা এমন আচরণ করবেন না। বাচ্চার কি করতে ইচ্ছে হয় সেটা ভাল ভাবে বুঝুন। তারপর তার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আপনার মতামত জানান। বাচ্চাদের খেলাধুলা করতে দিন। বিভিন্ন বন্ধুর সাথে মিশতে দিন। বাচ্চারা যেন বাবা মায়ের আড়ালে কিছু করার চেষ্টা না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। “বাবাকে বললেই বাবা বারণ করবে” এমন চিন্তা ভাবনা যেন বাচ্চারা পোষণ না করে সেই দিকে বাবাদের অনেক বেশি সচেষ্ট হতে হবে।

পরিশিষ্ট
বাবার সাথে সন্তানের বন্ধন যে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাপারে আপনি কি সচেতন ? শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন গঠণে বাবার সাথে সন্তানের নৈকট্য কতটুকু নির্ভর করে সেই ব্যাপারে আপনি কি অবহিত? আপনি যদি হোন একজন সচেতন বাবা, তবে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা একান্ত জরুরী। একজন শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাবা-মা উভয়ের সমান দায়িত্ব। কারও চাইতে কারও বেশি বা কম নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবার দায়িত্ব অনেকাংশে বেড়ে যায় কারণ বাবাকে সন্তানের সাথে এক ধরণের নৈকট্টের বন্ধন তৈরি করতে হয়। এই বন্ধন সন্তানের পরবর্তী জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031