গল্প

মুক্তির মিছিল

সাময়িকী : শুক্র ও শনিবার

-শফিকুল বারী শিপন

১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন
পলাশীর আম্রকানন, ব্রিটিশ বেনিয়া বঙ্গের রাজাকার, হানাদারের এ দেশীয় এজেন্ট মীরজাফর, মীর কাসিম, জগৎশেঠ, রাজ বল্লভ আর সামনে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা, বিহার উড়িষ্যা’র নবাব সিরাজের দেশপ্রেমিক এক বিশাল সেনাদল- দামামা বেজেঁছিল ঠিকই, লড়াই ও হয়েছিল- একদল মুক্তিকামী, দেশপ্রেমীক সাহসী বীর মীর মর্দান, মোহনলাল রা ঠিকই লড়েছিল প্রাণপণ; জীবনাবসান অবধি- পরাস্ত ও করেছিল বিপুল শত্রু বাহিনীর যোদ্ধা কেও। কিন্ত মীর জাফরদের পশ্চাৎপদ বিশ্বাসঘাতকতা, মুনাফিকি, কাপুরুষতা, নিকৃষ্ট, পশুর ও অধম কর্মকান্ডে বাংলার স্বাধীনতা কে নতজানু হয়ে কুকুরের ন্যায় বৃটিশ বেনিয়া পতি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্লাইভের হাতে দিয়ে এসেছিল, সেই জানোয়ারের দল।

তারপর দুইশত বছরের শৃঙ্খল, গোলামী,দাসত্ব, শোষন, অধিকার হরন, বৈষম্য, ক্ষুধা,আর পতন, ও দূদশার দীঘ প্রতীক্ষা!!

সে ছিল মুক্তির, শৃঙ্খল থেকে, দাসত্বের বেড়ীতে আটকে থাকা মুষ্টিবদ্ধ হস্তযুগল কে মুক্ত করার,ক্ষুধা, দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বেরিয়ে আসার। দু চোখে আঁকা স্বপ্ন বাস্তবায়নের আকুতি,আহাজারি; অমানিশা অন্ধকারের নিকষ কালো বদ্ধতার থেকে সূর্যস্নাত রৌদ্দজ্জল আলোয় ফেরার প্রত্যয়।

কোটি কোটি মানুষের সূর্যালোকিত
কোন নতুন ভোর দেখে জেগে ওঠার
ক্ষণটি অবশেষে সত্যি হয়ে এলো,

সেই অস্তমিত সোনার বাংলার সূর্য আবার উদিত হলো বাংলার নীলাকাশে, যখন মুজীব এলেন এই ভাগ্যাহত বাংলার মুক্তির দূত হয়ে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মনেওয়া এই স্বপ্নদূত একদিন সীমাহীন বাঁধা, বিপত্তি, আর বন্ধুর পথ পেড়িয়ে নেতৃত্বে আসলেন বাংলার। পশ্চিম পাকিস্তানি শোষন, শাসন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার অধিকার আন্দোলন, সংগ্রাম, নিপীড়ন, হত্যা,হরতাল, বন্ধ, অসহযোগ, মিছিল,উত্তাল ৬৯ নজিরবিহীন অংশগ্রহণের সুষ্ঠু অবাধ ‘৭০ এর নির্বাচন,- নিরংকুশ জয়, কাঙ্খিত বিজয়, জনতার স্বপ্ন বোনা, আর ও দিকে সামরিক হায়েনাদের হুংকার, ক্ষমতা হস্তান্তর না করার টাল বাহানা, রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, মুজীবের দৃপ্ত, বলিষ্ঠ আর অনড় অবস্থান, দৃঢ় উচ্চারণ, আগুন ঝরানো বক্তব্য, বিবৃতি,দাবী আদায়ের সাঁড়াশি কর্মসূচী, বাংলার ন্যায্য হিস্যা, নো কম্প্রোমাইজ নীতি, ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর অবিচল, নির্ভিক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় রুপ নিল ওয়ান পয়েন্ট ডিমান্ডে (এক দফা দাবী) পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা।যা হারিয়ে ছিলাম ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন! সেই এক দফা দাবি, ক্রমশ পরিনত হলো গনদাবীতে, বিশ্বের সকল মুক্তিকামী জাতী, গোষ্ঠী র সমর্থন পেল বাঙলার স্বাধীনতা।

এলো উত্তাল মার্চ মাস। ৭ ই মার্চ, রেসকোর্স, মহাকবির মহাকাব্যের বলিষ্ঠ উচ্চারণে অনুরণিত হলো সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি সন্তান, দৃপ্তকণ্ঠে শপথ-শত্রুবিতারণ, পাকিস্তানি হায়েনা নিধন, বাংলাকে পাপ ও পঙ্কিলতা মুক্ত করে পবিত্র করা। সময়ের সারথী হয়ে একে একে পেড়িয়ে গেল দিবস রজনী- মার্চের ২৬ এর রাতের আঁধারে রচিত হলো যে কলঙ্ক, যে বীভৎসতা, যে নারকীয়, পৈশাচিক গণহত্যা, বর্বরতা,নারী নির্যাতন, পাশবিকতা,ধর্ষন!! সেটাও আবার এই বঙ্গের পাপ ও দূষিত রক্তের উত্তারাধীকারীর সহায়তায়, প্ররোচনায় ও প্রেরণায়।

দীর্ঘ নয় মাসের এক বীরত্ব গাঁথা সংগ্রাম, মুক্তির জন্য যুদ্ধ, গেরিলা,জনতা, আত্মত্যাগ, আত্মাহুতি, বীরত্ব, শেখ মুজীবের স্বাধীনতা ঘোষনা (৭ই মার্চ প্রথমে) তার অনুপ্রেরণা, নির্দেশ, তার প্রতি সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালির কমিটমেন্ট, দেশপ্রেম – টলাতে পারেনী শহীদ হতে উদ্যত সেই মিছিল থেকে। লাখো শহীদদের রক্তে কেনা, আর অগণিত মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এ বাংলায় পুতুল বিবির দোসরেরা হুঁশিয়ার, মওদুদী, মান্নান আর জামাত, জাকেরের ঠাঁই নেই এই বাংলায়।মুজীবের বাংলায় ক্লাইভের দোসর, আইয়ূবের দোসর, ইয়াহিয়া -ভূট্টোর দোসর, পুতুল বিবির দোসর- ঘসেটির দোসরদের শুধু স্মশান হতে পারে বসতভূমি নয়!! অবশেষে ৯ টি মাসের উত্তাল তরঙ্গ পেড়িয়ে,মুক্তির মিছিলে অনেক ব্যাথার শ্রাবণ পেড়িয়ে ডিসেম্বর এর ‘১৬ তুমি এলে স্বাধীনতা হয়ে!! আমাদের ঘরে।

 

Add Comment

Click here to post a comment

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031