রঙঢঙ

শহুরে জীবনেও শরৎ, প্রকৃতিতে যেন কাশফুলের নরম ছোঁয়া

হ্যালোডেস্ক

নদীর ধারে কাশফুল ফোটার বর্ণনা সাহিত্যে, সে শরৎকালের কল্যাণেই। কিংবা ‘নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা’ এটাওতো শরতের জন্য। বাঙালীজীবনে শরতের উদযাপন ভালোই হয়। এমনকি শহুরে জীবনেও।

নাগরিক কোলাহল আর যাপিত জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে চুপিচুপি আসে শরৎ। মাতোয়ারা করে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায়, কাশফুলের শুভ্রতায় কিংবা শিউলির ঘ্রাণে। তারপর, হারিয়ে যায় দ্রুতই। শরৎ আসলে এমনই, স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে স্মৃতিতে দোলা দেয় সব ঋতুতে।

মডেল: মুক্তি লাবনী। ছবি: হ্যালোটুডে

নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা শরৎ ছাড়া আর কে ভাসাতে পারে? তাইতো শরতের বন্দনায় কবিগুরু বিমোহিত হয়েছেন বারবার। বর্ষা শেষে শরৎ আসে বলেই গাছের পাতারা হয় আরও স্নিগ্ধ, সজীব। চোখ মেললেই দেখা হয় বুনো ফুলের মাঝে রুপসী প্রজাপতি কিংবা ফড়িংয়ের সাথে। তবে ঋতুর রাণী শরতের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ কাশফুল। আকাশে ধবধবে সাদা মেঘের শতদল আর মাটিতে মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুল যে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য ছড়ায় তাতে থাকে শুধুই মুগ্ধতা। শিউলি ছাড়া শরৎ যেমন নিষ্প্রাণ তেমনি শারদীয় উৎসবও অনেকটাই অসম্পূর্ণ। শরৎপ্রেমে মাতোয়ারা মানুষ তাই নাগরিক কোলাহল পেরিয়ে শুভ্রতার ক্যানভাসে ছোটেন নিজেকে রাঙাতে।

দুই মাস পর পরই আমাদের দেশে ঋতুর পরিবর্তন হয়। এই ঋতু পরিবর্তনে শরৎকাল পেড়িয়ে এখন হেমন্ত। আর প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরতের আগমনী বার্তা। শরতের বিকালে নীল আকাশের নিচে দোলা খায় শুভ্র কাশফুল। এখন বাংলাদেশের চারদেয়ালের বাইরে প্রকৃতিতে চোখ রাখলে ধরা পড়ে শরৎ-প্রকৃতির মোহনীয় রূপ। কাচের মতো স্বচ্ছ নীল আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘের ভেলার ছোটাছুটি, নদীর ধারে কিংবা গ্রামের কোনো প্রান্তে মৃদু সমীরণে দোল খাওয়া শুভ্র কাশফুলের স্নিগ্ধতা, গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর বর্ষায় অঝোরধারায় শ্রাবণ ঢলের পর আসে শরতের রৌদ্রছায়ার খেলা- এই মেঘ, এই বৃষ্টি, আবার এই রোদ। আরও থাকে বিল ও ঝিলের পানিতে শাপলা শালুক ফুলের সুন্দর মায়াবী দৃশ্যের সমারোহ।

শরতের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার রাত্রি ভালোলাগা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। শরতকালেই সকাল বেলায় কুয়াশা পড়া শুরু হয়। শরতের সকাল বেলার কুয়াশা মাড়িয়ে খালি পায়ে চলতে কার না মন চাই। সে এক আনন্দময় সুখকর স্মৃতি। সেই সাথে কুয়াশার উপরে যখন সকালের সোনালী রবির আলো এসে পড়ে তখন শিশির বিন্দু মুক্তার দানার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক! শিউলি ফুল, স্বচ্ছ আকাশ, মায়াবী জ্যোৎস্নার কারণেই এমন নাম হয়েছে। তবে এর মধ্যে অন্যতম কাশফুল। প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশের মাঠে-ঘাটে কাশফুলের দেখা মেলে। এমনকি প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে এদেশে কাশফুল ছিল। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎ বন্দনায় এভাবেই ধরা পড়েছে শরৎ-প্রকৃতির মোহনীয় রূপ। কাচের মতো স্বচ্ছ নীল আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘের ভেলার ছোটাছুটি, নদীর ধারে কিংবা গ্রামের কোনো প্রান্তে মৃদু সমীরণে দোল খাওয়া শুভ্র কাশফুলের স্নিগ্ধতা, গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর বর্ষায় অঝোরধারায় শ্রাবণ ঢলের পর আসে শরতের আলোছায়ার খেলা- এই মেঘ, এই বৃষ্টি, আবার এই রোদ। মায়াবী শরতের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার ভালোলাগা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। এছাড়া মাঠে মাঠে সবুজ ধানের ওপর সোনালি আলোর ঝলমলানির মুগ্ধতা। আলোক-শিশিরে-কুসুমে-ধান্যে বাংলার প্রকৃতিও খুশি।

শরতের মনভোলানো প্রকৃতিতে মন যে কী চায়, তা বোঝা বড়ই মুশকিল! রোদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলায় মনেও যেন জমে মেঘ, আবার কখনো হয়ে ওঠে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। কিন্তু ব্যস্ত এ নগরে, শত ব্যস্ততার মাঝে আমরা পারি না মনের আকাঙ্খায় শরতের রঙে সাজাতে। তবু যেন মনে হয় হারিয়ে যাই-শরতের কাশফুল, গোধূলি, শিউলি আর জ্যোৎস্নার মাঝে। প্রিয়জনের হাত ধরে অনুভব করি স্নিগ্ধতা।

Add Comment

Click here to post a comment

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031