রকমারি

হাওরজুড়ে ধানকাটার উৎসব

-রফিকুল ইসলাম সবুজ

হাওর মানেই বিচিত্র এক জনপদ সেখানকার মানুষ, সেখানকার নিয়ম সবই যেন ভিন্ন এক আলাদা জগত। যেখানে করোনাকালে সারাদেশের মানুষ ঘরবন্দি, পুরো হাওরজুড়ে সেখানে ব্যস্ত হার না-মানা কৃষক। ভয়কে জয় করে সোনালী ধান কেটে ঘরে তুলছেন তারা।

চারিদিকে ধানকাটার মহা উৎসব। একটু দম ফেলারও যেনো সময় নেই তাদের। বসে নেই নারীরাও, হাওরজুড়ে তাদেরও কর্মমুখর ব্যস্ততা।

কিশোরগঞ্জের হাওরে এবছর বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। হাওরের বাতাসে দুলছে সোনালী ধান। যেদিকে চোখ যায় কেবল ধান আর ধান। তপ্তরোদ উপেক্ষা করে কষ্টে বোনা সেই ধান কাটছে কৃষক। কেউ কাটছেন, কেউ মারাই করছেন কেউ আবার এই ধান শুকাচ্ছেন রোদে। লকডাউনের কারণে ধানকাটা শ্রমিকের স্বল্পতা থাকলেও স্থানীয় শ্রমিক ও পরিবারের লোকজন পুষিয়ে দিচ্ছে এই ঘাটতি।

সম্প্রতি গরম ঝড়ো হাওয়ায় বোরো ধানের যে ক্ষতি হয়েছে, ধানের ন্যায্য দাম পেলে সে ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জে এ বছর ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। সেখানে এবার আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ধান। যা থেকে ৭ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন চাল পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গরম বাতাসে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে একেবারে নষ্ট হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান।

নিকলী উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের এক চাষি বলেন, এ বছর প্রায় ১৩ গন্ডা জমিতে ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু গরম বাতাসে ব্রি-২৯ ধানের বেশ ক্ষতি হওয়ায় ততটা লাভ পাওয়া যাবেনা। যারা ব্রি-২৯ ধান চাষ করেছেন তারা কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে আবহাওয়া ভাল থাকায় ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। যে ধান মাঠে আছে, আমরা সেই ধানের ন্যায্য দাম চাই।

একই এলাকার প্রবীণ এক কৃষক জানান, প্রায় ৩ একর জমিতে ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান চাষ করেছেন তিনি। ধারদেনা করে বোরো চাষ করেছেন। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার আগেই চাপ বাড়ে পাওনাদারদের। যে কারণে বৈশাখের শুরুতেই বেচতে হয় ধান। তাছাড়া মজুদের ব্যবস্থা না থাকায় কমদামে ছেড়ে দিতে হয় কষ্টের ধান। এ বছর পাইকাররা তার কাছ থেকে ৮৫০ টাকা মনে ধান কিনে নিচ্ছেন।

ধানের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. মোবারক হোসেন ও আব্দুল মালেক জানান, স্থানীয় কৃষকরা ধান কাটার পর যখন মাড়াই করে, তখনই আমরা তাদের ধান কিনে নেই। কারণ তারা ইচ্ছে করলেও ধান ঘরে রাখতে পারেনা। তাদের ধান মজুদ রাখার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে গতবারের চেয়ে এবার ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তির বিনিময়ে মাঠ থেকেই কাঁচা ধান কিনছেন তারা। প্রায় ৫ হাজার মন ধান ইতোমধ্যে তারা কিনে নিয়েছেন।

এদিকে বাজারে চালের দাম বেশি থাকলেও এই অনুপাতে বাড়েনি ধানের দাম। বর্তমানে কাঁচাধান বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকায়। ধান-চালের দামের পার্থক্যে অনেকটাই হতাশ তারা। কৃষকরা মনে করেন ধান ও চালের দামের এমন বৈষম্য রোধ করা গেলে ভবিষ্যতে ধান বিক্রিতে তারাও অনেক লাভবান হবেন।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, কৃষকরা উৎসবমুখর পরিবেশেই ধান কাটতে শুরু করেছে। আবহাওয়া এখনো কৃষকদের প্রতিকূলে। হয়তো অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোদমে ধান কাটা শেষ হবে। আর সেটিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্ভব হবে। এবার ধান কাটার সময় ও শ্রম বাঁচাতে সরকারি ভর্তুকিতে ১০০টি ধানকাটা যন্ত্র হাওরের কৃষকদের মাঝে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ধান কাটার কাজ অনেক সহজ হয়েছে। কম খরচ ও সঠিক সময়ে ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি মাঠ থেকেই বিক্রি করতে পারছেন কৃষক। তবে, হাওরে ধান মজুদ রাখার ব্যবস্থা থাকলে ধান নষ্ট কম হওয়ার পাশাপাশি আরও ভাল দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে।

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30