অনু গল্প

সামন্ত

ছবি: প্রতীকী

সামন্ত বলেছিল, মধুসূদনপুর বাজারে নেমে অটো নিয়ে নেবেন। চক ভবানীপুরে নামবেন। সাত টাকা ভাড়া। অনেকটা পথ। কিন্তু ওই ভাড়া। আগে আরও কম ছিল। পাঁচ টাকা। কিছুদিন হলো বেড়ে গেছে।

আরও বলেছিল, নেমেই দেখবেন ডানদিকে একটা রাস্তা নেমে গেছে। পথে চা সিগারেটের দোকান। রাস্তাটা কিছুটা বেঁকেছে। ফাঁকা ফাঁকা। একটা মন্দির আছে। রাধামাধব মন্দির। বিরাট চাতাল। পাশেই একটা রথ রাখা আছে। রথের মেলা বসে। ধূমধাম হয়। সেসময় রথ টানা হয়।

সামন্তর শরীরটা বেতের মতো ছিপছিপে। অর্থোপেডিক প্র্যাকটিশনার। না ডিগ্রি নেই। কিন্তু দেশ-গাঁয়ের লোক ওর কাছেই ছুটে আসে। সামন্তর কাছেই সব শোনা কথা। তার সঙ্গে আলাপ বুক ফেয়ারে। বাংলা অ্যানাটমির বইয়ের খোঁজ করছিল সামন্ত। দেবেশ বইটা দিয়ে বিল কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করল, এই বইটা নিয়ে কী করবে সে।

যা শুনল তাতে অবাক হবার আর কিছু বাকি রইল না। ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হবার সখ সামন্তর। কিন্তু পড়াশুনো তো ক্লাস এইটের বেশি এগোয়নি। তারপর কীভাবে কীভাবে একটা হোমিওপ্যাথির জাল ডিগ্রি জোগাড় করেছে। তাই থেকে ডাক্তার।

ধরা পড়ে নি। কে ধরবে? কেউ অভিযোগ করলে তবে না! অভিযোগের তো কোন সুযোগ কাউকে কোনদিন দেয়নি সামন্ত।

পথ নির্দেশ নিখুঁত ছিল। ক্যানিং লোকাল থেকে নেমে বাস- তারপর অটো। এতো ফাঁকা এলাকা এখনও আছে!

দেবেশের কৌতূহল ছিল। প্রকাশনার ব্যবসা। নিজেও লেখে টেখে। গল্পের রসদ পেলে ছুটে যায় এখানে ওখানে।

খবর দেওয়া ছিল।

সামন্ত সাদরে ডেকে নিলো দেবেশকে। খুব বেশি ভিড় নেই। তবু রুগী আছে কিছু। জটিল রুগীরা এসেছে দূর দূর গ্রাম থেকে। রিকশো ভ্যান, অটো – যে যেমন বাহন পেয়েছে চলে এসেছে।

ক্লিনিক বলতে একদিক খোলা তিনদিক ঘেরা বাঁশের বেড়া। একটা চাদর ঢাকা বড় টেবিল। সেটাই ওটি। কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার। মালটিপল ফ্র্যাকচার। একটা ছোট হাতুড়ি দিয়ে ঠুকঠুক ঠুকে দিচ্ছে কাউকে, কারো ভাঙা শরীর টেনেটুনে নানা কসরত করে সেট করে দিচ্ছে সে। তারপর ওষুধ অ্যান্টিসেপ্টিক, নানা লতাপাতা জড়িয়ে বেঁধে দিচ্ছে পরিষ্কার ন্যাকড়া দিয়ে। নানা আকারের শুকনো গাছের ডাল বেঁধে দিচ্ছে, যাতে ভাঙা শরীরটা আবার আগের মতো জুড়ে যায়।

কী ভাবছে?
তোমার ভিজিট কত।
তিরিশ টাকা। আর সেট করতে গেলে জখম বুঝে টাকা নিই। অনেক সময় জটিলতা থাকে। তখন সেট করতে সময় লাগে।
সে সময় একটু বেশি পয়সা নিই। সব মিলিয়ে একশো টাকা থেকে শুরু করে তিনশো টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
শঙ্করের সঙ্গে দেখা হলো দেবেশের। নিজে সাইকেল চালিয়ে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। চোলাই মদ খেয়ে খেয়ে শরীরের বারোটা বেজে গেছে। হাসপাতালের ডাক্তার সার্জারি করতে চায়নি, কারণ সার্জারির ধকল সইবার মতো ক্ষমতা তার নেই। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছিল পা।
সামন্ত বাঁচিয়ে দিয়েছে তাঁকে। একটুও ছোট হয়নি সেই পাটা। একেবারে আগের মতো স্বাভাবিক। কৃতজ্ঞ শঙ্কর আবার তার তরকারি ফিরির ব্যবসায় নেমে গেছে। সাইকেল চালিয়ে ডালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। নিজের গাছের কয়েকটা নারকোল এনেছে সামন্তকে উপহার দেবে বলে।

দেবেশ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল- এমনও হয়!

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

-কলকাতা থেকে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031