গল্প

‘গল্পটা বন্ধুত্বের’

সংগৃহীত ছবি

-মিলন মাহমুদ রবি

আমি তখন চতুর্থ শ্রেনীতে, ইংরেজী পরীক্ষার দিন, মিজান আমার পিছনের বেঞ্চে। খুব বিরক্ত করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরপর কলমদিয়ে খোঁচা মেরে এটাসেটা জানতে চাইলো। ‘মা’র আবার বারণ ছিল, নিজে যা পারবে সেটা আগে লিখবে। কোন দিকে তাকাতাকি করবে না। এক ফাঁকে, বললাম কি হইছে বল, স্যার দেখলে খাতা নিয়ে যাবে। কয়েকটা শব্দার্থ জানতে চাইল, বিরক্ত হয়ে বললাম কোনটা? বলল Carrot মানে কি? উত্তরে বললাম, লাল মূলা, তারপর Lady’s Finger= মেয়েদের হাতের আংটি, Potato = গোল টমাটো। বাকি আর মনে করতে পারছি না। সেই শৈশবের কথা।

এরই মধ্যে পেরিয়েছে অনেকগুলো বছর! ও খাতায় তাই লিখল। বাকী পরীক্ষা শেষে ক্লাসে ইংরেজী স্যার খাতা দেখাতে আনলেন। খাজী স্যারকে খুব ভয় পেতাম। স্যারের বেতের বারি সাংঘাতিক। সবার খাতা দিল, কিন্তু মিজান’কে খাতা না দিয়ে, স্যার কাছে ডাকলেন। আর পড়ে শুনালেন, মিজানে’র লেখা ওয়ার্ড মিনিংগুলো। তারপর স্যার ওকে যথারীতি বেত্রাঘাত শুরু করলেন। মার খেয়ে, ও আমাকে দেখিয়ে বলল মিলনে’র কাছ থেকে শুনে লিখছি। স্যার বলল ওতো লেখেনি। ও তো ঠিকই লিখছে। পড়াশুনা না করলে এমনই হয়। এবার ওতো রেগেমেগে শেষ, এখন ওর প্রতিশোধ নেবার পালা। আমি আবার মারামারি তেমন পারতাম না। ছুটির ঘন্টা বাজতেই মিজান দৌড়ে গেটের বাইরে দাড়িয়ে কলমের ক্যাপ খুলে বের করে আমাকে দেখাচ্ছে, মারবে বলে। আমি ভয়ে বের হচ্ছি না। এরই মধ্যে ‘আব্বা’ চলে আসলেন গেটের সামনে। আমাকে নিয়ে চলে গেলেন। সেবার আর মারতে পারলো না। সুযোগ বুঝে একদিন কয়েকটা ঘুষি মেরে দিলো। আমার আবারও রাগ জন্মালো। আমিও অন্য একদিন ক্লাসে কৌশলে ওর সাদা শার্টে (স্কুল ড্রেস) দিলাম কলম দিয়ে দাগিয়ে। একেবারে পাকিস্তানের ম্যাপের মত!

পরের দিন ওর মা স্যারের কাছে এসে নালিশ দিল। ওকে বাসায় মেরেছে শুনেছি। বন্ধুর জানা ছিলনা কে করেছে এমনটা? তারপর পঞ্চম শ্রেনীর পর অন্য স্কুলে ভর্তি হলাম। মিজানও অন্য কোথাও। মাঝেমধ্যে দেখা হতো, একসাথে খেলধুলা করতাম। হঠাৎ করে হারিয়ে গেলাম আমরা। সেই মিজানের খোঁজ অন্য বন্ধুদের মাধ্যমে আলোচনায় জানলাম, ঢাকাতে আছে। কথা হলো ফোনে। দেখা করার সময় চাইলাম, দু’জনার সময় মিলিয়ে দেখা হলো আমাদের। দেড়যুগেরও পর! দেখা মাত্র জড়িয়ে ধরলো। অনেকক্ষণ গল্প হলো। আর অনেক পুরনো স্মৃতি নিয়ে আলাপ। দু’জনেরই কর্মব্যস্ততা। সময়ও বলছে বিদায় নিতে হবে।

যাবার বেলায় বললাম দোস সেবার তোর শার্টে আমিই দাগিয়েছিলাম। সরি বলে জড়িয়ে ধরলাম। ও হেসে বলল, তুই অনেকটা তেমনই রয়ে গেলি। বাকিটা সময়ের পরিবর্তন মাত্র। শৈশব আর কৈশোরের এমন কিছু স্মৃতি আজও টিকটিক করে বাজে। প্রতিটি মানুষেরই মাঝে হারানো কিছু গল্প বাসা বুনে থাকে। সময় পেরিয়ে যায়, বেলাও শেষ হয় তার নিজ নিয়মে। এর মাঝে পরিরর্তন ঘটে অনেক কিছুরই। কিন্তু কিছু স্মৃতি, কিছু সময় আর কিছু বন্ধুত্বের গল্প কখনোই ভোলার নয়।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

June 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30